শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস: রাষ্ট্রপতি

শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস: রাষ্ট্রপতি

‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে আমরা যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, তাকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদের এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। ’ তিনি বলেন, দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে শান্তি ও অগ্রগতির ধারা যারা ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।   আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথের জ্যোতি কবিতার কিছু অংশ পড়ছি –
ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়,
তিমির বিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। এটি আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমি আপনার মাধ্যমে সংসদ নেতা ও সংসদ সদস্যসহ প্রিয় দেশবাসী এবং দেশের বাইরে বসবাসরত সব প্রবাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের ত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। সেই থেকে শুরু। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। কখনো নিজের এবং পরিবারের গণ্ডির মধ্যে বাধা পড়েননি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও গেয়েছেন বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশের জয়গান।

তিনি বলেন, ১৯৩৮ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় হয় এবং প্রথম পরিচয়েই তিনি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমেই রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তারপর থেকে লেখাপড়া, রাজনীতি ও জনসেবা যুগপৎভাবে চলতে থাকে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী প্রথম আঘাত হানে বাঙালির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র উপর। ঘোষণা দেয় ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ শেখ মুজিব সচিবালয় গেট থেকে গ্রেফতার হন। অর্থাৎ, পাকিস্তান কায়েম হওয়ার ৮ মাসের মধ্যেই তিনি কারাবরণ করেন।

আব্দুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি ও পারিবারিক বন্ধন কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সব সময়ই বঙ্গবন্ধুকে তার চলার পথে সাহস জুগিয়েছেন, বিপদে ভরসা দিয়েছেন। নিজের ও পরিবারের চেয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।  ‘১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আমাদের আবাসভূমির নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, হবে বাংলাদেশ’। ’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যা ছিল মূলত স্বাধীনতারই ডাক। এই ভাষণের পর বাংলার ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে।

‘বঙ্গবন্ধু সংসদ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারেও ছিলেন খুবই সচেতন। এ প্রসঙ্গে প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসেই তিনি বলেছিলেন ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদের আর একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কোনো প্রস্তাব আনার আগে পার্টিতে তা আলোচনা করে তারপর উপস্থাপন করবেন। তা না হলে এর দ্বারা পার্টির শৃঙ্খলা নষ্ট হবে’। ’ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনো চলমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন