পুলিশের চার কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন

পুলিশের চার কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ঘটনায় এক মাসেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশের চার কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে আবেদন করেছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক যৌক্তিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন :

বেগমগঞ্জ সার্কেলের এএসপি মো. শাহজাহান শেখ, বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, এসআই হাবিবুর রহমান ও এএসআই মফিজুল ইসলাম, একলাশপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ভূঞা, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ও এলাকার চৌকিদার আলী আজগর।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্কেল এএসপি চার বছর ধরে সেখানে কর্মরত আছেন। ঐ এলাকায় সুমন ও সম্রাট বাহিনী সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও নারীকে বিবস্ত্র করার ঘটনা জানতেন না বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে তিনি পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন।

বেগমগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশিদ বিটভিত্তিক কর্মকর্তাদের কার্যক্রম তদারকিতে তার ভূমিকা ছিল শৈথিল্য। তিনি সোর্স, কমিউনিটি পুলিশ বা বিট কর্মকর্তা হতে ঘটনা অবহিত না হওয়ায় পদক্ষেপ নেননি। কিন্তু আমরা মনে করি তিনি রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তার কর্ম এলাকায় এত বড় ঘটনা ঘটার পরেও জানেন না বলে যে দাবি করেছেন তা যুক্তিসংগত নয়।

দুই এসআই ও এএসআই সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরা একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিট কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তারা দাবি করেছেন, ভিকটিম বা তার কোনো আত্মীয়স্বজন ঘটনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করেননি। এত বড় সংঘটিত অপরাধের বিষয় জানে না বলে এরা দুই জন দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। এছাড়া প্যানেল চেয়ারম্যান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও চৌকিদার ঘটনা সম্পর্কে জানে না বলে যে দাবি করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এরা নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

সুপারিশসূমহ :

নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যসূচিতে বিষয়টির অমানবিক দিক, নৈতিক অধঃপতন ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ—এ ধারণাসমূহ ব্যাপকভাবে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রাম পুলিশিং কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রতি ৫০ পরিবারের বিপরীতে এক জন চৌকিদার এবং ইউনিয়নের প্রতিটি ব্লক ডিজিটাল যোগাযোগের আওতায় নেওয়া হলে নিভৃত গ্রামে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা বাড়বে, কমবে অপরাধ।

বিট পুলিশিং কার্যক্রম এবং কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা নামমাত্র চালু না রেখে তা জোরদার ও দায়বদ্ধতার মধ্যে নেওয়া দরকার। গ্রামে সন্ত্রাস, রাহাজানি, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও ব্যবসা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগ ও রাষ্ট্রের নজরদারি আরো জোরদার করা দরকার।

গত ২ সেপ্টেম্বর একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ৩২ দিন পর নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে তা সবার নজরে আসে। এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট ৫ অক্টোবর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে দেয়।

কমিটির প্রধান চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার, সদস্য নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসরাত সাদমীন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের জবানবন্দি গ্রহণ ও পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।

 

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন