প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলির কারণে উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এমন নির্দেশনা দেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কর্মকর্তারা হঠাত্ বদলি হলে যাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া অনেক প্রকল্প মামলাজনিত কারণে বিলম্বিত হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে দ্রুত এগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিতে বলেছেন তিনি। সভায় সড়ক বিভাগের প্রকল্পের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাস্তা তৈরির সময় যাতে পানি চলাচলে কোনো সমস্যা তৈরি না হয় সে দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজন হলে পানি চলাচলের ব্যবস্থা ঠিক রেখে উঁচু করে রাস্তা তৈরি করতে হবে। হাওর-বাঁওড় এগুলো দেশের প্রাণ। এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। সড়ক তৈরির সময় যাতে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গতকাল একনেক সভায় একটি নতুন ও দুইটি প্রকল্প সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দ এবং নতুন প্রকল্পে বরাদ্দসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
সভায় সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ১ম সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। সংশোধনের কারণে এর ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ব্যবহার হবে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সভায় জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিনগুণ হারে নির্ধারিত হওয়ায় এই খাতে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বেড়েছে ২২৬ কোটি টাকা। মূল ডিপিপিতে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য ধারণাগত ডিজাইন বাবদ ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে ডিটেইল্ড ডিজাইন ও ২০১৯ সালের সওজ অধিদপ্তরের সিডিউল অব রেটস্? অনুসারে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণে ৪৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের সড়ক গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে ১৬৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। তাছাড়া চলমান কাজে রেড সিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় সাতটি প্যাকেজের ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
সভায় ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)-জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২য় সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১ম সংশোধনী হতে ব্যয় বেড়েছে ১০৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। সভায় ৩১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, বিদ্যমান ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন এবং ফুটওভার ব্রিজে এস্কেলেটর স্থাপন করা হব। তাছাড়া সড়কে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা হ্রাস করতে ফেন্সিং স্থাপন করা, যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হবে। সভায় সিটি করপোরেশনের প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রকল্পটিতে সংস্থার নিজস্ব তহবিল হতে ৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সম্পূর্ণ খরচ সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে দিতে হয়েছেন।