সমাচার রিপোর্ট
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে জেল দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম তাদের এই সাজা দেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি জানান, অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ছয় মাস ও অবৈধ মাদক রাখার দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে দুজনকে।
এদিকে হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, ধানমন্ডি থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আশফাক রাজীব হাসান সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
সোমবার সকালে হাজী সেলিমের ছেলে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। আসামিরা হলো, হাজী সেলিমের ছেলে এরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন|
সুনির্দিষ্ট অভিযোগে হাজী সেলিমের
বাসায় অভিযান: র্যাব
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার লালবাগে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব। সোমবার এ কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব। আশিক বিল্লাহ জানান, অভিযানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম রয়েছেন। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার বিশেষায়িত দল রয়েছে। পাশাপাশি র্যাব-৩ ও র্যাব ১০ এর সদস্যরা রয়েছেন।
এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধর করা হয়। এ সময় ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। এ ঘটনায় সোমবার হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর গাড়ি থেকে কয়েক ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। গাড়িটি হাজী সেলিমের। তবে ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন।
হাজী সেলিমের ছেলের
বাসায় যা যা পাওয়া গেল
নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের ছেলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সোমবার দুপুর ১২টা শুরু হওয়া অভিযানে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে।
দুপুর ১২টার দিকে ৮তলা ভবনে অভিযান শুরু করে র্যাব। এ সময় এরফানের বাসা থেকে বেশ কিছু অবৈধ জিনিস উদ্ধার করে র্যাব। এর মধ্যে আছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, যেটা অবৈধ বলে ধারণা করছে র্যাব। সেটির কাগজপত্র এখনও দেখাতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক মদের বোতল রয়েছে বাড়িটিতে। পাওয়া গেছে বেশ কিছু বিয়ারের ক্যান। বিপুল সংখ্যক ওয়াকিটকি সদৃশ যন্ত্রপাতি জাতীয় সরঞ্জামও পাওয়া গেছে।
র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা ধারণা করছেন ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ঢাকা শহরে অবৈধভাবে কোনো সিগন্যালিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হতো। এগুলোর ন্যায্য কাগজপত্র দেখাতে না পারলে সেগুলোও অবৈধ।
নিষিদ্ধ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে ইরফান
সেলিম নিয়ন্ত্রণ করতেন পুরান ঢাকা
নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের ছেলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব।
অভিযানে সরকার নিষিদ্ধ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, বিদেশি মদ, অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল প্রভৃতি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল বিকালে অভিযানের এক পর্যায়ে হাজী সেলিমের চাঁন সরদার দাদার বাড়ির ভিতরে সাংবাদিকদের নিয়ে গেলে এসব অস্ত্র-মাদক ও নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কিং সিস্টেম দেখা যায়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজী সেলিমের ছেলে পুরান ঢাকা তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মধ্যে রেখেছেন। এজন্য তিনি অবৈধভাবে ভিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করতেন। এই ডিভাইস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ট্র্যাক করতে পারেন না। সরকারি অনুমোদ ছাড়াই তিনি এই ভিপিএস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম করেছিলেন। এসব ডিভাইসের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই পুরো পুরান ঢাকার তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।
দাদা বাড়ি ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অভিযান চালিয়ে এসব ওয়্যারলেস সিস্টেম সরঞ্জাম ও ৩৮টি কালো ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। যা সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়া ব্যবহারের অনুমতি নেই। এ ছাড়া সেখান থেকে লোডেট একটি বিদেশি পিস্তল (আমেরিকান), একটি চাইনিজ কুড়াল, ৭ বোতল বিদেশি মদ ও বেশ কিছু বিয়ার জব্দ করে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই তিনি তার বাসায় এই ভিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম করেছিলেন।
সাধারণত এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কাউকে সরকার অনুমোদন দেয় না। এ ছাড়াও এসব ওয়্যারলেস কখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ট্র্যাক করতেও পারেন না।