ঢাকা: শেষবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে গেলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (৮৫)। কিন্তু তিনি নিথর নিস্তব্ধ।
দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা সেখানে তাকে স্মরণ করলেন, শ্রদ্ধা জানালেন।
তার জীবন ও কর্ম নিয়ে তারা মূল্যায়ন করেছেন নিজের মতো করে। তবে দলমত নির্বিশেষে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীরা স্মরণ করেন এক-এগারোতে তার সাহসিকতার কথা।
জানাজা শেষে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউ করিম বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যু আইন অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সাংবিধানিক বিষয়ে অপরিসীম দক্ষতা ছিল তার। অসাংবিধানিক সরকারের সময়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক। এক-এগারোর সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও আরেক রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলা পরিচালনা করে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন আইন অঙ্গনের দিকপাল। তিনি আমাদের শিক্ষাগুরু ও পথিকৃৎ। তিনি পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আইন পেশার সম্মান ও মর্যাদা উজ্জ্বল করে গেছেন। এক-এগারোর সময় যখন অনেক বিশিষ্ট আইনজীবীর ভূমিকা বিতর্কিত ছিল। তখন তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দুই নেত্রীর মামলা পরিচালনা করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সারা জীবন তিনি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে লড়াই করেছেন। এক-এগারোয় তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দুঃসময়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মতো মানুষের খুব প্রয়োজন ছিল।
বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মরদেহ সুপ্রিম কোর্টে আনা হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, রেলপথ মন্ত্রী নরুল ইসলাম সুজন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সুপ্রিম কোর্ট বারের কোষাধ্যক্ষ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী এই জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মরদেহে প্রধান বিচারপতিসহ উভয় বিভাগের বিচাপতিগণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবগণ, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে দলটির শীর্ষ আইনজীবীরা, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র, সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা তিনটায় বনানী কবরস্থানে স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।