বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া নিম্নচাপটি ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে নিম্নচাপটি পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে। ঘনীভূত নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যা গতকাল রাতে মোংলা বন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার । যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে বাড়তে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সন্ধ্যায় বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপটির প্রভাবে প্রবল বর্ষণের পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়ারও সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট এলাকার নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উপকূলবর্তী এলাকায় দিনভর টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন দুই শতাধিক পর্যটক।
আবহাওয়ার অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই জায়গায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যা গতকাল সন্ধ্যানাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম/উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি বুধবার রাতেই সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সেটি আরো ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং দুপুরের পর গভীর নিম্নচাপের রূপ পায়।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাসে বলেছে, আজ শুক্রবার বিকাল বা রাতে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে স্থলভূমি অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ গত ২০ মে যে জায়গা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান স্থলভূমিতে ঢুকেছিল, এই অতি গভীর নিম্নচাপটি ঠিক সেই পথই অনুসরণ করতে পারে। এই নিম্নচাপ কি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে জানতে চাইলে নাম এক ঊর্ধ্বতন আবহাওয়াবিদ জানান, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নিম্নচাপ ঘনীভূত হলে ঘূর্ণিঝড় হয়। কিন্তু এই নিম্নচাপ যেহেতু আগে থেকেই বৃষ্টি ঝরাচ্ছে সেহেতু এর শক্তি কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় নাও হতে পারে। তবে যদি এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে তাহলে আজ দুপুরনাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তখন এর নাম হবে ‘গতি’।
নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির এই প্রবণতা আগামী দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি এবং দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।