রংপুরের পীরগঞ্জে মানসিক প্রতিবন্ধী মওলা মিয়া ৩০ বছর থেকে শিকলে বন্দী জীবনযাপন করছেন। মওলা ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের মৃত মোজাব উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তার বয়স ৪৮ বছর। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তার উন্নত জীবনের জন্য খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মওলার বয়স যখন ১৮, তখন একজন স্বাভাবিক যুবক ছিলেন। সে সময় মওলা ঢাকা চলে যায়। ঢাকায় অবস্থান করার সময় কে বা কারা মওলার মাথায় ঢিল ছুড়ে মারলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
এরপর তাকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সুস্থ হননি। মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্নজনকে উত্ত্যক্ত করতো। অর্থাভাবে তার পুরোপুরি চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয়ে উঠেনি। তার ভাইয়েরা সকলেই দিনমজুর। দিন আনে দিন খায়। পাড়া প্রতিবেশি ও মানুষজনকে উত্ত্যক্ত করায় ৩০ বছর আগে মওলার ভাইয়েরা তার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে বিভিন্ন স্থানে গাছের সাথে বেঁধে রাখতো।
সর্বশেষ গত ১০ বছর আগে তাদের বাড়ির পাশে এক জঙ্গলে মওলার পায়ে লোহার শিকল পড়িয়ে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। আর তখন থেকেই মওলা পুরোপুরি শিকল বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। মওলার ভাইয়েরা সেখানেই মওলাকে খাবার দেওয়াসহ প্রতিদিন তার খোঁজ-খবর নেন।
শিকল পরা অবস্থায় শিকল থেকে ৫ হাত দূরে মওলার গোসলের ও একটা গর্তে বাথরুমের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একচালা ছোট একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে মওলার জন্য। সেখানেই শিকলবন্দী অবস্থায় তার দিন কাটছে।
মওলার ভাই গোলাপ মিয়া বলেন, মওলার চিকিৎসার জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আর্থিক সহায়তায় আমার ভাই সুস্থ হলে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারতো।
ভেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মওলা এলাকার মানুষকে মারধর করতো। ওর পরিবারের লোকজন তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে। খুব শিগগিরই মওলার উন্নত জীবনের জন্য আবাসন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।