তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসেরা রিপোর্ট বদলে অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ

তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসেরা রিপোর্ট বদলে অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ

বরিশাল: স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য স্ত্রীর ভিসেরা রিপোর্ট না নিয়ে অন্যেরটা দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সোমবার (০৫ অক্টোবর) বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার বলতলা এলাকার বশিরুজ্জামান রাজু।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি রাতে তার স্ত্রী দুলালী খাতুন বসতঘরে হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার পর কর্মরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর দুলালীর মরদেহ ভান্ডারিয়া থানার অর্ন্তভুক্ত তার বাবার বাড়ি চরআইল গ্রামে নেওয়া হয়। খবর শুনে তার ভাই-বোনেরা নিজ বাড়িতে আসেন। তারা মরদেহের ময়নাতদন্ত করবেন এমন প্রশ্ন তুললে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ দুলালীর প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং ময়নাতদন্তের অনুকূলে ভান্ডারিয়া থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এদিকে, ২৯ জানুয়ারি বিকেলে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ দুলালীর স্বামী রাজুকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আটক করে কাঠালিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

রাজু জানান, ৩০ জানুয়ারি তার স্ত্রীর ভাই নজরুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম তাকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। যেখানে তিনি ৩০ লাখ টাকা দিলে কোনো মামলা হবে না বলে জানান।

কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় ৩০ জানুয়ারি শ্যালক শহিদুল কাঠালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে স্ত্রী দুলালী বেগমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার কথা উল্লেখ করা হয়। আর নির্যাতন সইতে না পেরে দুলালীর কীটনাশক সেবন করার কথাও বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাজু অভিযোগ করেন, সেই রাতে কাঠালিয়া থানার তৎকালীন ওসি তাকে বেধরক মারধর করেন এবং ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। এরপর পরের দিন ওই মামলায় রাজুকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

রাজু বলেন, ওই মামলায় চার মাস আমি জেলহাজতে ছিলাম। হাজতে থাকাবস্থায় মৃত দুলালীর বোন নাসরিন বেগম বাদী হয়ে একই ঘটনার অনুকূলে হত্যার অভিযোগে আদালতে আরও দুটি মামলা দায়ের করেন। যেসব মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার মহাখালী থেকে পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট আসে। যার নং ২৫৫৭৩বি। এরপর ভান্ডারিয়া থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন তার দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির অনুকূলে পিরোজপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই সালের ২৫ আগস্ট দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্টসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যে ভিসেরা রিপোর্টে দুলালীর মরদেহে বিষের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। দুলালীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, নিম্ন রক্তচাপের কারণে মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু দুলালীর ২৫৫৭৩বি নম্বরের ভিসেরা রিপোর্টের স্থানে পিরোজপুর সদর থানায় ১৪ জুন দায়ের করা মামলার ভিকটিম সুমনা খাতুনের (১৫) ভিসেরা রিপোর্ট (নং ২৯২৯৪বি) দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন রাজুর বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য তিনটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান।

রাজু বলেন, দুই ভিসেরা রিপোর্টে দুই রকম তথ্য। হত্যা মামলার স্পর্শকাতর স্থানে অর্থাৎ অন্যের ভিসেরা রিপোর্ট দিয়ে আদালতে জালিয়াতিপূর্বক পরপর তিনটি মামলার চার্জশিটে একই ভিসেরা রিপোর্ট প্রেরণ করে এসআই মোঃ মাহমমুদুর রহমান।

তিনি বলেন, দুলালীর বোন নাসরিন বেগম বাদী হয়ে যে দুটি মামলা দায়ের করেছেন, এরমধ্যে একটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

রাজু আরও বলেন, দুলালী শারীরিকভাবে আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। ২০১৮ সালে তার হৃদরোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু হয়। যা আমিই বহন করে এসেছি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ভাই শহিদুল ও বোন নাসরিন তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। যার একেকটি মামলায় একেক ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বোনের দুটি মামলার একটিতে শ্বাসরোধ এবং অপরটিতে বিষ দিয়ে দুলালীকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে সর্বশেষ দায়ের করা মামলাটিতে আমার দুই ভাইকেও আসামি করা হয়েছে, যারা ঘটনাস্থলেই ছিল না বলে রাজুর দাবি।

তিনি বলেন, জেলে থাকা ও জামিনে মুক্ত হওয়ার পরও ৩০ লাখ টাকায় বিষয়টি রফাদফা করার প্রস্তাব পাই। যেখানে টাকা পেলে বাদীরা মামলা উঠিয়ে নেবেন বলেও জানানো হয়। কিন্তু তাতেও আমি রাজি হইনি।

রাজু জানান, দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট নং ২৫৫৭৩বি হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একই ঘটনার অনুকূলে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলায় দুলালীর স্থানে সুমনা খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট নং ২৯২৯৪বি দিয়ে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত বশিরউজ্জামান রাজুকে দোষী সাব্যস্ত করে জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান। এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার দাবি করছি। সঙ্গে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও অন্যায়ভাবে আমাকে যারা ফাঁসাচ্ছে তাদের বিচারও দাবি করছি।

এদিকে, বিষয়টি ভুল হয়েছে জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহমমুদুর রহমান বলেন, দুটি পাতা একসঙ্গে আসায় ভুলবসত এটি হয়েছে। যা সংশোধন করা হবে। আর ভুল হতেই পারে। সংশোধন করা হবে। তারিখের দিন ভুল সংশোধনের আবেদন করা হবে।

ভুল ভিসেরা রিপোর্টে রাজুকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটিও সংশোধন করা হবে।

কাঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় বলেন, মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিলের পুরো ঘটনা আমার যোগদানের আগে। আমি চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ থানায় যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। তবে এক সপ্তাহ আগে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শোকজ করেছেন। আমরাও এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বেইলি রোডে আগুন: ভবনের ব্যবস্থাপকসহ চারজন রিমান্ডে

ঢাকা-৪ আসনের গেজেট প্রকাশ স্থগিত থাকবে: হাইকোর্ট