সুনামগঞ্জ: সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তারেকুজ্জমান তারেক নামে আরও এক অভিযুক্তকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
সুনামগঞ্জ: সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তারেকুজ্জমান তারেক (২৮) নামে আরও এক অভিযুক্তকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
তারেক সুনামগঞ্জ শহরের সদর উমেদনগরের হাসপাতাল সংলগ্ন নিসর্গ-৫৭ নামের বাড়ির রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি বর্তমানে মেজরটিলা (বাসা-৫, ৩য় তলা, দিপিকা আ/এ বাসায় বসবাস করতেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সুনামগঞ্জ ক্যাম্প সিপিসি-৩ এর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল জানান, গণধর্ষণের ঘটনার পর সিলেট থেকে পালিয়ে দিরাইয়ে যান তারেক। পরে মাথার লম্বা চুল ও দাড়ি চেঁছে ফেলেন, যাতে করে তাকে কেউ চিনতে না পারেন। মঙ্গলবার তাকে আটক করে র্যাব।
তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।
এ নিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে ছদ্মবেশে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। আর পৃথক অভিযানে নগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ অর্জুন লস্করকে মাধবপুর থেকে গ্রেফতার করে। মামলার আরেক আসামি মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আটক করে র্যাবের একটি দল।
ওইদিন দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন ও তার সহযোগী আইনুলকে আটক করে র্যাব।
এছাড়া সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে কানাইঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মাহফুজুর রহমান মাছুমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের লামা দলইকান্দি গ্রামের ছালিক আহমদের ছেলে ও এমসি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
র্যাব সূত্র জানায়, আসামি তারেকের মুখে দাড়ি ছিল। তিনি দাড়ি-গোঁফ ও মাথার চুল ফেলে দেন। তাতেও রক্ষা হয়নি। র্যাব-৯ এর সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে ঠিকই খুঁজে আটক করতে সক্ষম হন। গ্রেফতারকৃত তারেককে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটে আনা হবে।
এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় ছয় আসামিকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার আসামি মাহবুবুর রহমান রণি, রাজন ও তার সহযোগী আইনুলের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এর আগে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মামলার আরও তিন আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তারা হলেন- প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও পাঁচ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম। ওইদিন তাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট দ্বিতীয় আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনাশি শেষে বিচারক সাইফুর রহমান পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই নারীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকারে করে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা (২১(৯)২০২০) দায়ের করেন ওই নারীর স্বামী। মামলায় এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রণি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)।
এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলাটি (নং-২২(৯)২০২০) দায়ের করেন তিনি।