নারায়ণগঞ্জ: ১৪ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে তালা ভেঙে জিম্মিদশা থেকে সেই অবরুদ্ধ পরিবারকে মুক্ত করলো পুলিশ।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মৌচাক হাজী বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকার সেই পরিবার প্রাণনাশের হুমকি ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন বলে তারা জানান।
জানা যায়, জিম্মিদশায় থাকা পরিবারগুলোর বাসার আশেপাশে সন্ত্রাসীদের ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে দিনভর, করছে গালমন্দও। বাড়ির বাইরে আসলে মেরে ফেলার হুমকি অব্যাহত রেখেছে। সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে জুমার নামাজ পড়তে যেতে পারেননি বাড়ির মালিকের ছেলে নজরুল ইসলাম রনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে এ বিষয়ে বাড়ির মালিকের মেয়ে ঝর্ণা আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি বা কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদীর ভাই নজরুল ইসলাম রনি।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ফারুক বিকেল পাঁচটায় বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইশতিয়াক রাসেল অভিযোগ দায়েরের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত করছি।
এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকায় ২৫-২৬ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন হাজী আব্দুল জব্বার। তার পরিবার ছাড়াও ওই বাড়িতে আরও ১৭টি ভাড়াটিয়া পরিবার ছিল। ইতোপূর্বে তিনি ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ি ক্রয় করেন। যে বাড়ি ক্রয় করতে চেয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাজী সালাহউদ্দিনের ছেলে মাসুম রানা। কিন্তু বাড়ির মালিক মাসুম রানার কাছে ওই বাড়ি বিক্রি করেননি। এরপর থেকেই মাসুম রানা ক্ষীপ্ত হয় আব্দুল জব্বার ও তার পরিবারের উপর। এরপর মাসুম রানার হুমকির কারণে ওই বাড়ির ১১টি ভাড়াটিয়া পরিবার চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
বাকি ৬ পরিবারকে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ভবনের গেটে তালা মেরে জিম্মি করে রাখে মাসুম রানা। ঘটনা জানাজানি হলে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ রাত ১২টায় তালা ভেঙে পরিবারগুলোকে মুক্ত করে।
আব্দুল জব্বারের ছেলে নজরুল ইসলাম রনি জানান, এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর মাসুম রানা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের বাড়ির লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে আমরা বিষয়টি ৯৯৯-এ কল করে অবহিত করি। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই ফরিদ উদ্দিন এসে আমাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর মাসুম রানার চাচা হাবিব বিচার সালিশে বসে জানান, মাসুম রানা এ বাড়ি থেকে ওয়ারিশ কিনেছেন তাই মাসুম রানাকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। কিন্তু জমি ক্রয় করার কোনো কাগজ-পত্র বা প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি মাসুম রানা। কিন্তু অন্যায়ভাবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার বিচার আমরা মেনে না নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। ওই ১৫ লাখ টাকার জন্যই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আমাদের বাড়ির সামনে কাঁটাতার ও দেয়াল দিয়ে পথ আটকে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় মাসুমরা।
এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে মাসুম রানার বিরুদ্ধে।