সূত্র জানায়, অধিদপ্তরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য চালাতো মালেকের শক্তিশালি সিন্ডিকেট। তার এই সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুইজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন প্রধান সহকারী, দুইজন অফিস সহকারী মিলে ছয়জন। ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (দুই বছরে) সারাদেশে বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে শতাধিক লোককে নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মালেক। এছাড়া স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মালেকের অপকর্মে অধিদপ্তরের যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্মতি দিতেন না, তাদেরই নাজেহাল করা হতো। এমনকি ভুঁইফোঁড় ও নামসর্বস্ব কিছু সাংবাদিককে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রতিবেদন করাতেন। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এটি মালেকের অন্যতম টেকনিক। গত ২০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া বামনার টেক এর ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্স ভবন থেকে অস্ত্র-গুলি ও জালনোটসহ আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেককে (৬৩) গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১। ওই বাসায় মালেকের শোয়ার ঘর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৫০ হাজার টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব।
পরদিন র্যাব বাদী হয়ে তুরাগ থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। এরপর সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার মালেককে আদালতে উপস্থাপন করলে দুটি মামলায় সাতদিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গ্রেফতার আবদুল মালেক তার কর্মজীবনে অধিদপ্তরের সাবেক বেশ কয়েকজন মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মালেক সর্বশেষ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই অধিদপ্তরে আমার দায়িত্বকালে কোনো নিয়োগ হয়নি। আগে যদি মালেক এমন কাজ করে থাকেন, সেটা আমার জানা নেই। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে অধিদপ্তরের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত। অনেক ডিজির গাড়ি চালক ছিলেন মালেক।
তিনি বলেন, আগে আমি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত ডিজি) ছিলাম। আগেও আমার সঙ্গে কোনো বদলি, পদোন্নতি, নিয়াগের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বর্তমানে আমি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি)। আমার আমলে এসব দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, গ্রেফতারের পর মালেকের অবৈধ অর্থ-সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানান, তার যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো রক্ষার্থে এবং নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রটি নিজে হেফাজতে রেখেছিলেন। আর জাল টাকার বিষয়ে তিনি জানান, তার বিভিন্ন কারবারে অনেক টাকা লেনদেন করতে হয়, সেজন্য তিনি জব্দ করা জালনোটগুলো কাছে রেখেছিলেন।
অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন মালেক। বিদেশে অর্থপাচার ও জ্ঞ্যাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ড্রাইভার মালেককে তিন তিনবার চিঠি দিয়ে তলব করেছিল।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আশিক বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মালেকের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবে তার সম্পদের বিষয়ে র্যাবের কোনো বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, গ্রেফতার মলেকের বিষয়ে দুদক, সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রয়োজন বোধে যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তবে র্যাব তাদের সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর।