ঢাকা: জ্বালানি সাশ্রয়ী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে দৈনিক ৫১০ টন গ্লাস উৎপাদন করবে সরকার। এসব গ্লাস সোলার এনার্জিতে ব্যবহার যোগ্য হবে।
প্রায় পাঁচ ধরনের গ্লাস উৎপাদনে একটি আধুনিক কারখানা স্থাপিত হবে। ফলে দেশের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানও।
নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত কাঁচের দেশীয় চাহিদার অন্তত ৪০ শতাংশ পূরণের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় কমানো যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি রাজধানীতে গ্লাস দিয়ে ভবন তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখন এ রকম গ্লাসে ঘেরা বহুতল ভবন চোখে পড়ে। অনেকেই ভবনে দেয়ালের বদলে ব্যবহার করছেন মোটা গ্লাস।
বর্তমানে যানবাহন, আসবাবপত্র, ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনায় গ্লাসের ব্যবহার বাড়ছে। বছরে দেশে গ্লাসের চাহিদা বাড়ছে প্রায় আট থেকে ১০ শতাংশ হারে। এছাড়া গ্লাস তৈরিতে ব্যবহৃত বালু ও গ্যাস দেশে সহজলভ্য। এজন্য এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার গ্লাসের বাজার রয়েছে। দেশে বার্ষিক গ্লাসের চাহিদা ২৫ কোটি বর্গফুট।
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ কোটি বর্গফুট। শিল্পগ্রুপগুলো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উন্নতমানের গ্লাস উৎপাদন করছে।
বেসরকারিখাতে পিএইচপি, নাসির ও এমইবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে উন্নতমানের গ্লাস তৈরি করছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। তবে সরকারি উদ্যোগে গ্লাস কারখানা সেইভাবে গড়ে ওঠেনি। এ জন্য নতুন প্রকল্পের আওতায় গ্লাস শিল্পকে আরও জনবান্ধব করতে চায় সরকার।
বিসিআইসি সূত্র জানা যায়, দেশের দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো উন্নয়ন ও টেকসই শিল্পায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ‘বাংলাদেশ গ্লাস ফ্যাক্টরি স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৫৭৫ জন পরোক্ষভাবে আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ২ হাজার ৩২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার বাড়বকুণ্ডে অবস্থিত চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের (সিসিসি) সীমানার অভ্যন্তরে ৫৯ একর খালি জায়গার উপরে স্থাপিত হবে। চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও প্রস্তাবিত কারখানার লোকবলের আবাসিক ও স্কুলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে দৈনিক ৫১০ টন গ্লাস উৎপাদন করবো। এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে গ্লাসের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবো। পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। চলমান উদ্যোগের আওতায় উন্নতমানের গ্লাস উৎপাদন করবো।