ঢাকা: জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া আসন্ন পাঁচটি উপ-নির্বাচনে এককভাবে প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। এই আসনগুলোর নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোট কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এমনকি জোটগতভাবে কোনো আলোচনাও করেনি বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে গণফোরামের দুজন ও বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরে জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচিত ৮ এমপি সংসদে যোগ দেবেন না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে অবস্থান থেকে ফিরে এসে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একা সংসদে যোগ দেন। তার কিছুদিন পরই যোগ দেন গণফোরামের অপর নির্বাচিত এমপি মোকাব্বির খান।
সূত্র জানায়, সংসদে যোগ দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে বেঁকে বসেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জনের মধ্যে ৫ জন। তারা সংসদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দেবেন এমন একটি পরিস্থিতিতে দল সিদ্ধান্ত দেয় সংসদে যোগ দেওয়ার। তারাও যোগ দেন সংসদে। তবে ওয়াদায় অটল থাকেন বগুড়া থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে যোগ না দেওয়ায় তার আসনটি শূন্য হয়ে যায়। পরে উপ-নির্বাচনে ওই আসনে দল মনোনয়ন দেয় বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে। তিনি নির্বাচিত হয়ে সংসদে যোগ দেন। তখনও জোটের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি বিএনপি।
এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় বেশ কয়েকজন এমপির মৃত্যুতে সংসদের আসন শূন্য হয়। এর মধ্যে বগড়া-১, গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪, ঢাকা-১০, যশোর-৬ আসনের নির্বাচন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ওই আসনগুলোতেও বিএনপি এককভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। যদিও কোনো আসনে তারা বিজয়ী হতে পারেনি।
সামনে আরও ৫টি আসনের উপ-নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এগুলো হলো- ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১, নওগাঁ-৬ ও পাবনা-৪। এই আসনগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বনন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে পাবনা-৪ আসনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও নওগাঁ-৬ আসনে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ মো. রেজাউল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। পাইপ লাইনে আছে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসন। ওই দুটি আসনেও ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি-জমা ও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এককভাবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বিএনপি।
সূত্র জানায়, একাদশ নির্বাচনের পরে মূলত ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোটের নেতারা বিভিন্ন সময় একদল আর এক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন। কেউ কেউ জোটের নিষ্ক্রিয়তার জন্য বড় শরিক বিএনপিকে দোষারোপ করেন। আবার কেউ বলেন, জোট এখনও আছে। সময় হলে দেখতে পাবেন।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ হয় না। উপ-নির্বাচনগুলোতে তারা এককভাবে প্রার্থী দিলেও আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। আমরাও আলাদাভাবে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিলাম। কিন্তু যে দেশে কে কত ভোট পাবে এটা নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেয়, ১০৪ ভাগ ভোট কাস্ট হয়, সে দেশে প্রার্থী দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, জোটগতভাবে প্রার্থী না দিলেও যেসব জায়গায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে আমাদের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে বলেছি। এটা যদি সাধারণ নির্বাচন হতো তাহলে অবশ্যই জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া হতো। এসব উপ-নির্বাচন গুরুত্বহীন। তাই আমরা যাচ্ছি না।
তাহলে বিএনপি কেন যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির জায়গায় থাকলে আমরাও অংশ নিতাম। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়। জানান দেয় যে তারা মাঠে আছে। রাজনীতিতে এটার দরকার আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নেতাদের সঙ্গে উপ-নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তারাতো এসব নির্বাচনে এমনিতেই অংশ নিতে আগ্রহী না। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাটা কোন পর্যায়ে চলে গেছে সবাই জানে। এই নির্বাচন কেমন হবে তাও বোঝা যায়।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে। সবাই আমাদের সঙ্গেই আছে। আগেও সেরকমভাবে ছিল।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, উপর থেকে এমনটি মনে হলেও ঐক্যফ্রন্ট ও ২০দলের সবাই এক আছে। নির্বাচনের মাঠে সবাই এক সঙ্গে কাজ করবে।
২০দলের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, জোট আছে কি না সেটাইতো সন্দেহ। ইতোমধ্যে জোটের অনেক নেতাও প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন। বিগত উপ-নির্বাচন ও সামনের উপ-নির্বাচন নিয়ে ২০দলীয় জোটে কোনো আলোচনা হয়নি। এজন্য বিএনপিই দায়ী।
তিনি বলেন, আমি মনে করি বিএনপির উচিত ছিল প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আগে জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা। তা না করে তারা মিডিয়ায় বলছেন জোট তাদের সঙ্গে আছে। তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ তারা নিজেরা প্রার্থী দেবে আর আমরা তাদের সঙ্গে মাঠে কাজ করবো সেটা হতে পারে না। সমঝোতার মধ্যে হলে অবশ্যই মাঠে থাকতাম।
এসব বিষয়ে বিএনপির আরও দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, এটা তাদের অধিকার আছে। আর জোটতো অনেকদিন ধরে নিষ্ক্রিয় আছে। উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। তাতে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যায়নি।
তাহলে ভবিষ্যতে ঐক্যফ্রন্ট কি আবার চাঙ্গা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, “হতেই পারে। ”