লালমনিরহাট: স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার হওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই স্বাস্থ্য সহকারী ভবেশ চন্দ্র রায় ওরফে উত্তমকে (৩২) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়।
গ্রেফতারের দিন থেকে এ বরখাস্তাদেশ কার্যকর হবে।
এর আগে বুধবার (২৬ আগস্ট) দিনগত রাতে উপজেলার মহিষাশ্বহর এলাকা থেকে আদিতমারী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বরখাস্ত হওয়া স্বাস্থ্য সহকারী ভবেশ চন্দ্র রায় ওরফে উত্তম উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি মহিষাশ্বহর গ্রামের মৃত নিরঞ্জন কুমার রায়ের ছেলে। তিনি আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সহকারী পদে কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ভবেশ চন্দ্র রায় উত্তম ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পার্শ্ববর্তী মহিষখোচা গ্রামের মৃত জগদীশ চন্দ্রের মেয়ে বিথী রানীকে নোটারী পাবলিক ও সনাতন ধর্মমতে বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছর না যেতেই যৌতুক লোভী ভবেশ চন্দ্র স্ত্রী বিথী রানীর কাছে যৌতুক বাবদ আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন। বিথীর গরিব বিধবা মা টাকা দিতে না পারলে উত্তম বিথীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং দ্বিতীয় বিয়ের হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে বিথী রানী আদালতের আশ্রয় নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (৭০/২০১০) দায়ের করেন। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর একপর্যায়ে কৌশলী ভবেশ চন্দ্র আগামীতে যৌতুক দাবি করবেন না এবং স্ত্রীকে নির্যাতন বা দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না মর্মে আপস মীমাংসায় লিখিত দিয়ে আদালত থেকে মামলার নিষ্পত্তি পান।
কিছুদিন আগে স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে আপসের শর্ত ভেঙে যৌতুক লোভী ভবেশ চন্দ্র দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ কাজে বাধা দেওয়ায় পুনরায় যৌতুকের আড়াই লাখ টাকা দাবি করে বিথী রানীর ওপর নির্যাতনের চালায় ভবেশ চন্দ্র। গত ৮ আগস্ট যৌতুকের আড়াই লাখ টাকা আনতে জোর করে বাবার বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করে ভবেশ চন্দ্র। কিন্তু টাকা আনতে বাবার বাড়ি না যাওয়ায় বিথীকে ভবেশ ও শ্বশুরবাড়ির অন্যরা মিলে বেধম মারধর করে টেনে হিঁছড়ে বাচ্চাসহ তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
স্থানীয়দের সহায়তায় আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি হন আহত বিথী। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ১৬ আগস্ট ভবেশ চন্দ্রসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বিথী। সেই মামলায় অভিযান চালিয়ে ২৬ আগস্ট (বুধবার) রাতে ভবেশকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে পাঠায় আদিতমারী থানা পুলিশ। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ভবেশকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আপস মীমাংসার কথা বলে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেলেও আপসের কোনো প্রক্রিয়া না নিয়ে উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন বাদী বিথী।
এদিকে একটি চক্র ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। সরকারি বিধিমতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে মামলা নথিভুক্ত হলে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের বিধান থাকলেও ওই চক্রটি সব মহলকে ম্যানেজ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্বেও কারাগারে থাকা ভবেশ চন্দ্রকে চাকরিতে বহাল রাখার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে অবশেষে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্মারক নং – সিএস/লাল/প্রশাঃ/২০২০/৩৪৫৬/০৬ এ ভবেশ চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) ভবেশ চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছালে অভিযুক্ত ভবেশ চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করেন কর্তৃপক্ষ। তা গ্রেফতারের দিন থেকে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।