বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

ঢাকা: বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

যারা এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন তাদের পরিবার যাতে আইনের আশ্রয় পায় তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেন।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

হারুনুর রশীদ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে গত ১০/১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ যারা স্বজন হারিয়েছে, গুম হয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তারা কি আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার পাবে না? সংবিধানের এই বিধানগুলো কি আমরা স্থগিত করে দিয়েছি?

নিজের নির্বাচনী এলাকার ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ! এটা কী সম্ভব! আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করছে, আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে। পুলিশের গুলিতে টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। আদালতে বিচার হচ্ছে। কিন্তু তিন হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ডের শিকার যারা হয়েছে তাদের পরিবার কি আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না?

রুমিন ফারহানা বলেন, ২০০৩ সালে প্রণীত হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনটির চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও এই আইনের আওতায় খুব বেশি মামলা হয়নি। যে গুটিকয়েক মামলা হয়েছে তার অগ্রগতি সম্পর্কে বেশি জানি না। একটি মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খরব এসেছে। অসংখ্য ব্যক্তি হেফাজতে নির্যাতন ও মুত্যুর শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার মামলাগুলো কী হলো?

তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবার নজর কেড়েছে। দেশে প্রতিদিনই একটির বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। অথচ বারবার বলা হচ্ছে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর একটিও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। টেকনাফের ওসি প্রদীপ ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম পেয়েছেন। এই পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ছয়টি ঘটনার উল্লেখ করা হয় তার প্রত্যেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

এরপর বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে সবাই। এখানে ওসি প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায় কেউই এড়াতে পারেন না। ওসি প্রদীপের প্রথম পদোন্নতিটি বিএনপির আমলে হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্ট বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছিল। ওই ক্লিনহার্টের সময় অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনে চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করা আমরা আগেও দেখেছি।

‘ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে অমানবিকভাবে কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমরা তখনও এর বিরুদ্ধে ছিলাম। এখনও এর বিরুদ্ধে। ’

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠক ছিলেন জিয়া: কাদের

বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে ভগবান জ্ঞান করে রাজনীতি করছে বিএনপি: কাদের