চাঁদপুর: ‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর জেলায় স্থানীয় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ছোট ইলিশ ধরা পড়লেও বড় ইলিশের দেখা নেই। তবে গভীর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।
সেই ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়ত।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় আড়তে গিয়ে দেখা যায় পুরো ঘাট জুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। আড়তের মালিক, শ্রমিক, বরফ ব্যবসায়ী সবাই এখন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে যেসব ইলিশ আমদানি হচ্ছে, সেসব ইলিশ রাত ৯টার মধ্যে বিক্রি হয়ে আড়তগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক, ট্রেন ও বাসে করে রফতানি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ও রোববার এ দু’দিনে ইলিশ ভর্তি ১৮ থেকে ২০টি মাছধরা ট্রলার আসায় ইলিশের এ ছড়াছড়ি বলে জানিয়েছেন মৎস্য ঘাটের ব্যবসায়ীরা। ট্রলারের পাশাপাশি নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর থেকে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান বোঝাই করে আনা হয় প্রচুর ইলিশ। সাগরে ইলিশের ব্যাপক আমদানিতে ইলিশের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত বলেন, এসব ইলিশ সাগরের কাছাকাছি নোয়াখালীর হাতিয়া, বরগুনা ও ভোলা জেলার। গত দু’দিন আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে এখন ৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭শ’ থেকে থেকে ৮শ’ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা কেজি দরে। আর বড় আকারের ইলিশ অর্থাৎ এক থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ হাজার থেকে ১৮শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা তিন-চারদিন আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।
চাঁদপুর জেলে সমিতির নেতা তসলিম বেপারী বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চলে যাচ্ছে। কিন্তু চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় রুপালি ইলিশের দেখা নেই। জেলার নিবন্ধিত ৫০ হাজারেরও বেশি জেলে পরিবার অনেকটা হতাশ। তবে কিছু জেলে উপায় না পেয়ে সাগরে গিয়ে ইলিশ আহরণ করছেন। সাগরে গিয়ে ইলিশ আহরণে অনেক সময় জেলেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়েন।
সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকার একাধিক জেলে জানান, চলতি বছরে সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। করোনার কারণে ওই সময়টাতে জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে নামলেও জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছিল না। তবে এক সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, জাটকা সংরক্ষণের সময় চাঁদপুরের অধিকাংশ জেলে বেপরোয়া হয়ে জাটকা নিধন করেন। ইলিশ না পাওয়ার এটিও একটি কারণ। এছাড়া পাথরঘাটা, বড়গুনা ও ভোলার শেষ প্রান্তে জেলেরা নদীতে ভরা মৌসুমে নদীর এ পাড় থেকে ওপাড় পর্যন্ত বড় বড় জাল পেতে রাখেন। এতেও উজানে মাছ আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবর মাসে পরিপক্ক ইলিশগুলো সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার মিঠা পানিতে চলে আসে। তখন পদ্মা-মেঘনায় বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ২২ দিন চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত সময়সীমা মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক করা হয়নি।