মার্কিন চাপে চীনা সহযোগিতায় সমৃদ্ধ হওয়া ব্রিটিশ পরমাণু প্রকল্পগুলি এখন চীন থেকে দূরে সরছে। কিন্তু স্বনির্ভরতার দিকে হাঁটায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচও।
মাত্র চার বছর আগেই চীন-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের ‘স্বর্ণ যুগ’ শুরু হয়। এই সম্পর্কের মূলে ছিল যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পরমাণু প্রকল্পে চীনা অর্থায়ন, বিশেষ করে চীনা সরকারি সংস্থা সিজিএন বা ‘চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রুপ’। যারা ইতিমধ্যে পরমাণুখাতে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৪৫ হাজার কোটি) লগ্নি করেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, হংকং বিষয়ে নতুন চীনা নীতিকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট্র। একই ইস্যুকে ঘিরে চীনের সাথে দূরত্ব বাড়াতে যুক্তরাজ্যের ওপর চাপও দেওয়া হয় বলে খবর। সেই চাপের মুখেই চীন-যুক্তরাজ্যে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে, বলে মনে করছেন অনেকে।
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ থেকে হুয়াওয়েই এর থেকে আর কোনো নতুন পণ্য কিনবে না তারা। হুয়াওয়েই ছাড়াও আরো ১৮টি সংস্থা সিজিএন-গোষ্ঠীর সদস্য।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর, চীনও যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করে দেয়। বলে, এমন অসহযোগিতার ফলাফল ভোগ করতে হতে পারে যুক্তরাজ্যকে।
যুক্তরাজ্যে চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ শিয়াওমিং বলেন যে, এমনটা ঘটলে ব্রিটিশ পরমাণু প্রকল্পে সব ধরনের লগ্নি বন্ধ করতে বাধ্য হবে তারা।
কতটা গুরুত্বপূর্ণ চীন?
চীনা অর্থায়নের হাত ধরে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি পরমাণু প্রকল্পে কাজ চলছে, যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিংকলি পয়েন্ট ও সাইজওয়েল। এছাড়াও, ব্র্যাডওয়েল পরমাণু প্রকল্পে একটি স্বতন্ত্র প্রকল্প গড়তে চায় চীন, যেটি চীনের বাইরে সবচেয়ে বড় চীনা পরমাণু প্রকল্প হবার সম্ভাবনা রাখে।
সাইজওয়েল ও হিংকলি প্রকল্পে সরাসরি কাঁচা টাকা বা ‘হার্ড ক্যাশ’ লগ্নি করেছে সিজিএন বা ‘চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রুপ’৷ দুটি প্রকল্পেরই ৬৬ শতাংশের মালিকানা তাদের হাতে। সিজিএন এই প্রকল্পগুলি থেকে সরে গেলে এর জায়গায় আসতে পারে ফরাসী সংস্থা ইডিএফ-এর আর্থিক সাহায্য। কিন্তু অর্থায়নের হাতবদলের ফলে প্রকল্পগুলির পেছনে খরচ বাড়তে পারে ব্যাপকভাবে।
যুক্তরাজ্যের এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জনাথন মার্শাল বলেন, ‘‘অনেকগুলিই প্রকল্প রয়েছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু হিংকলি প্রকল্পই এগোবে বলে মনে হচ্ছে। ব্র্যাডওয়েল তো রাজনৈতিক কারণে এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর সেটা সম্পূর্ণরূপে একটি চীনা প্রকল্প।’’
এই সমস্যা থেকে বেরোতে অন্যতম উপায় হতে পারে পরমাণুখাতে সরকারি লগ্নি বাড়ানো, যা এই মুহূর্তে বাস্তবিক নয়। যুক্তরাজ্যের পরমাণুনীতির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা ঠিক করবে এই বছরের শেষে প্রকাশ হতে চলা জাতীয় পরমাণু নীতি।
এবিষয়, যুক্তরাজ্যের এনার্জি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক রব গ্রস বলেন, ‘‘এখনই আমরা বলতে পারছি না নতুন পরমাণুনীতিতে কি থাকবে, কারণ রাজনীতি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, যে সংস্থাগুলি প্রকল্প তৈরি করবে তারা আর নীতিনির্ধারক সংস্থাগুলি এক নয়।’