বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমাজন টেকনোলজিস। সেই আমাজনের এবার বাংলাদেশি শাখা দেখা দিয়েছে।
আসল আমাজনের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও বৈধ আমাজনের আদলে বানানো হয়েছে সবকিছু। আর নকল আমাজনে প্রতারণার মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টদের।
‘আমাজন বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জ রেজিস্ট্রার থেকে নিবন্ধন (নিবন্ধন নম্বর- সি-১৪-৮৮৫৬) নিয়ে এভাবেই কার্যক্রম শুরু করেছে একটি অনলাইন ডোমেইন। www.amazon-bd.com ডোমেইনে প্রবেশ করলে দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমাজনের আদলে তৈরি করা হয়েছে ‘আমাজন বাংলাদেশ’ এর লোগো। আর আগামী ‘১৩১ দিন’ পর আমাজন বাংলাদেশ চালু হতে যাচ্ছে বলেও ওয়েবসাইটে দেখানো হচ্ছে।
তবে শুধু আমাজনের আদলেই নয়, বরং সরাসরি ‘আমাজন’ এর লোগোও ব্যবহার করা হয়েছে এই সাইটে। আর লোগোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আসল আমাজনের ওয়েবসাইটের (www.amazon.com) রিডিরেক্ট ছিল। অর্থাৎ ঐ লোগোতে ক্লিক করলে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে সরাসরি আমাজনের মূল ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। ফলে একজন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ই-কমার্স গ্রাহকের কাছে মনে হবে, এটি যেন সত্যিই আমাজন। তবে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, ওয়েবসাইটটিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একেক সময় একেক ধরনের ছবি ও তথ্য ভেসে উঠছে ওয়েবসাইটের হোম পেজে।
জানা যায়, আমান উল্লাহ চৌধুরী নামে জনৈক এক ব্যক্তি এই আমাজন বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী। নিজ ফেসবুক আইডিসহ বিভিন্ন স্থানে নিজেকে ‘আমাজন বাংলাদেশ লিমিটেড’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পরিচয় দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, এই পরিচয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে বাংলাদেশে আসল আমাজনের প্রতিনিধি হিসেবেই জাহির করেন। এমনকী নিজেকে ‘বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আমাজন বাংলাদেশে চালু করতে যাওয়া ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় চিঠি দিয়ে থাকেন আমান উল্লাহ চৌধুরী।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমান উল্লাহ চৌধুরী স্বীকার করেন যে, তার প্রতিষ্ঠিত ‘আমাজন বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমাজন টেকনোলজিসের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে দেশের বাজারে কার্যক্রম থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগকেই ‘করাপ্টেড’ দাবি করে সেই সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে আমান উল্লাহ বলেন, আমার আমাজনের সঙ্গে ওই আমাজনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, ওই আমাজন যখন বাংলাদেশে আসবে, যখনই আসুক, যেন আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারি, ট্যাগ হতে পারি। আমাদের এখানে অনলাইনভিত্তিক যে প্ল্যাটফর্মগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই করাপ্টেড এবং তাদের প্রচুর পরিমাণে বদনাম। এর জন্য ওদের (আসল আমাজন) সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা চলছে। তাদের দিকনির্দেশনা মেনে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমি টেকনিক্যাল লোক না। আমাদের ওয়েবসাইট থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) নিয়ন্ত্রণ করে। তারা হয়তো ভুলে মূল আমাজনের লোগো দিতে পারে। তবে এখন নেই।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে ‘আমাজন বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিকদের ‘দালাল’ বলে ফোন কেটে দেন আমান উল্লাহ চৌধুরী।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে অথবা আসল আমাজনকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করতেই আমাজনের আদলে ওয়েবসাইট ডোমেইন তৈরি করা হয়েছে।
বৈধ আমাজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হওয়া আল আমিন কবির ‘আমাজন বাংলাদেশ’ এর মতো বিষয়কে ‘মিসরিপ্রেজেন্টেশন’ বা ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ বলে মনে করেন।এই তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, এভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা ট্রেড মার্ক আইনেরও লঙ্ঘন হতে পারে। এটা যদি আমাজনের নজরে আসে তারা কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। আমাজন এসব বিষয়ে অনেক কঠোর বলে আমরা দেখেছি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে এমন একটি কাজ হলে সেটা আমাজনের কাছেও আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কাজ সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৩ ও ২৪ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এই ধারায় মামলা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে আসলে আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।
ই-ক্যাব এর পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, এই ব্যক্তি ই-ক্যাব এর সঙ্গেও যোগাযোগ করে প্রোফাইলে নিজেকে অ্যামাজন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দাবি করে। ই-ক্যাবসহ বিভিন্ন গ্রুপের কমেন্টে অ্যামাজনের পরিচয় দিয়ে অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাই গত মাসেই তাকে ব্লক করেছিলাম।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। বাংলাদেশে আমাজন আসবে এমন কোনো তথ্যও আমাদের জানা নেই।