লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চান এবং জেরার্ড পিকে, জর্দি আলবা, ভিদাল, ইভান রাকিতিচ ও লুইস সুয়ারেসের বিদায় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সবমিলিয়ে ক্যাম্প ন্যু এখন গভীর সংকটে।
এসব কিছুর সূত্রপাত চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বার্সার ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে।
বায়ার্ন ম্যাচে মেসি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। নেলসন সেমেদো ইউরোপীয় পর্যায়ে নিজের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। আর্তুরো ভিদালকে দেখে মনে হয়েছে খেলাই ভুলে গেছেন। এমনকি মাঠের পাশে রাখা বিজ্ঞাপনী বোর্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রায় সর্বনাশ হতে যাচ্ছিল তার। বাকিদের অবস্থাও একই। আর বাজে একটা মৌসুমের শেষদিকে সেতিয়েনের জন্য এটা ছিল বিদায়ের ঘণ্টা বাজার মুহূর্ত।
সবমিলিয়ে বড় এক ধাক্কায় ডুবতে বসেছে বার্সার নৌকা। ফলে রদবদল হওয়াই স্বাভাবিক। এরইমধ্যে নৌকার মাঝি তথা কোচ সেতিয়েন চাকরি খুইয়েছেন। এখন দলের পাঁচ ‘বুড়ো’ খেলোয়াড় বিদায়ের অপেক্ষায় আছেন। আর নতুন মাঝি হিসেবে আসতে চলেছেন নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ রোনাল্ড কোম্যান। তবে তিনি আসুন আর নাই আসুন, নেইমারকে ফিরিয়ে আনতে চান ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তমেউ। যদিও গত মৌসুমে একবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ দাবি করেছেন, দুই বছর আগে ট্রান্সফার ফি’র বিশ্বরেকর্ড গড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমানো নেইমারকে ফিরিয়ে আনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে বার্সা। যদিও কয়েক মাস আগেই করোনা মহামারির কারণে আর্থিক ক্ষতির দোহায় দিয়ে নেইমারকে কেনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন বার্সা প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সমর্থকদের চাপ, মেসির ক্লাব ছেড়ে যাওয়া ঠেকানো এবং নিজের চেয়ার বাঁচাতে এই পথেই হাঁটবেন তিনি।
‘স্পোর্ত’র রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নেইমারকে আনার জন্য আতোঁয়া গ্রিজম্যানকে হাতিয়ার বানাতে চান বার্তমেউ। এই ফরাসি ফরোয়ার্ডকে নেইমারের সঙ্গে অদলবদলের প্রস্তাব দেবেন তিনি। সঙ্গে পিএসজিকে বাড়তি ৫০-৬০ মিলিয়ন ইউরোও দেবেন। এই গ্রীষ্মে এখন নেইমারই বার্তমেউ’র প্রধান ভরসা বলে মনে হচ্ছে। নেইমারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২০ মিলিয়ন ইউরো।
এদিকে মেসির বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন থামছেই না। আগামী বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে তার। কিন্তু নতুন চুক্তির কোনো খবর নেই। এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ছায়া থেকে বের হয়ে বিশ্বসেরা তকমা অর্জন করতেই পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। সেই লক্ষ্যে এই মৌসুমে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তিনি। আর মেসি গত মৌসুম থেকেই নেইমারকে ফেরানোর জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন-দরবার করে আসছেন।
চলতি মৌসুমে পিএসজির হয়ে লিগ শিরোপা জেতার পর এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে তার দল। আর মাত্র দুই ম্যাচ জিতলেই ইউরোপ সেরার তকমা যাবে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের দখলে। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৫ ম্যাচ খেলে ১৯ গোল করেছেন তিনি। প্যারিসিয়ানদের হয়ে এখন পর্যন্ত ৮৩ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৭০টি। এমন একজন খেলোয়াড়কে এত সহজে হাতছাড়া করতে চাইবে না পিএসজি।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, ১১ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে ৩০০ এর বেশি গোল করা নেইমারকে ১৭৫ মিলিয়ন ইউরোর কমে ছাড়বে না পিএসজি। এজন্যই গ্রিজম্যানকে চুক্তির অংশ করতে চায় বার্সা। ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে বার্সায় আসার পর থেকে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন গ্রিজম্যান। মেসির সঙ্গে তার জুটিও গড়ে ওঠেনি। বার্সায় নিজের প্রথম মৌসুমে ৪৮ ম্যাচে মাত্র ১৫ গোল করেছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা।
নেইমারের বার্সায় ফেরা নিয়ে আলোচনা চললেও তিনি নিজে কিন্তু এবার স্পিকটি নট! গতবার নিজেই খুব করে নিজের পুরনো ঠিকানায় ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনকি এজন্য গাঁটের অর্থও খরচে রাজি ছিলেন। কিন্তু এবার তার দল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে পৌঁছে গেছে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আরবি লিপজিগের মুখোমুখি হবে তার দল। এবার যদি তিনি ও পিএসজি শিরোপা জিতে যায়, তাহলে বার্সার কপাল পুড়বে সন্দেহ নেই। কারণ তাহলে বিশ্বসেরা হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন এই ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
নেইমারকে বার্সার কেন দরকার? এটার অনেক কারণ আছে। তবে মেসির বিকল্প একজন হিসেবেই এবার দেখা হচ্ছে তাকে। কারণ ৩৩ বছর বয়সী মেসি এই মৌসুমে বার্সা না ছাড়লেও এমন কিছু ঘটতে বেশি দেরিও নেই। মেসির পক্ষে এত ভার খুব বেশীদিন বহন করা সম্ভব নয়। তখন মেসির মতোই একজন সুপারস্টার ফুটবলার দরকার পড়বে বার্সার, ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে এবং পরবর্তী নেতা হিসেবেও। নেইমার ছাড়া আপাতত বার্সার সামনে আর কোনো বিকল্পও নেই। কিন্তু বার্সা ও বার্তমেউ’র কপাল আদৌ খুলবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।