চালুর সম্ভাবনাহীন কোম্পানি শেয়ারবাজারে থাকবে না

চালুর সম্ভাবনাহীন কোম্পানি শেয়ারবাজারে থাকবে না

 নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রুগ্‌ণ ও বন্ধ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এবং নতুন করে চালুর সম্ভাবনা নেই- এমন জেড ক্যাটাগরিভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি তালিকাচূ্যত করার পাশাপাশি কিছু কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন, কিছু কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক বা প্রশাসক বসানো হবে। জেড ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পৃথক তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে তিন ধরনের নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। তবে সব জেড কোম্পানির এজিএম বা ইজিএমে ই-ভোটিং বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে সব শেয়ারহোল্ডার তাদের মতামত জানাতে পারেন।

সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেড ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারগুলোর বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অংশ হিসেবে নতুন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বিএসইসি। এরই মধ্যে নির্দেশনা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সিদ্ধান্তগুলো রোববারের মধ্যে নির্দেশনা আকারে জারির প্রস্তুতি চলছে। নতুন নির্দেশনা ২০০২ সালের ১ আগস্টের নির্দেশনাকে প্রতিস্থাপন করবে। বর্তমানে ডিএসই ও সিএসইতে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানি ৫৩টি।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, ব্যবসায় লাভ বা লোকসান হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, কিছু কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে রুগ্‌ণ হয়ে আছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতদিন এদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছিল না। এভাবে শেয়ারবাজার চলতে পারে না। চলতি সপ্তাহের মধ্যে কমিশন এ বিষয়ক নির্দেশনা চূড়ান্ত করবে। নির্দেশনা জারির ছয় মাসের মধ্যে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে তা পরিপালন করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংশ্নিষ্টরা জানান, এ নির্দেশনা শুধু বিদ্যমান জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তা নয়। যদি কোনো কোম্পানি পরপর দু’বছর জেড ক্যাটাগরিতে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

গত বছরের ৩ মার্চ ‘আইন আছে প্রয়োগ নেই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমকাল। এরপর কমিশন নির্দেশনাটি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনই সংশোধন ও কঠোর করে বিএসইসি নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জেড ক্যাটাগরিভুক্ত সব কোম্পানিকে পৃথক তিন ভাগ করা হবে। প্রথমত, যেগুলোর অস্তিত্ব নেই বা বছরের পর বছর বন্ধ বা কোনোভাবেই চালুর সম্ভাবনা নেই কিংবা মালিক বা উদ্যোক্তারা পলাতক, তাদের এক শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে যেসব মূল মালিকপক্ষ স্বল্প সংখ্যক শেয়ার নিয়ে কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসান দেখিয়ে ফায়দা তুলছে। তৃতীয় শ্রেণিতে রয়েছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু থাকা কোম্পানি, যেগুলো ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতায় লোকসান করছে।

এ ছাড়া যেসব কোম্পানির মূল মালিকপক্ষ স্বল্প সংখ্যক শেয়ার নিয়ে কোম্পানি দখলে রেখেছেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসান দেখাচ্ছেন, সেগুলোকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ই-ভোটিং প্রক্রিয়ায় পরিচালক নির্বাচন করতে হবে। কোম্পানিটির যতটি শেয়ার থাকবে, ততটি ভোট হবে। যার যত শেয়ার, তার ভোটও হবে ততটি। এ ক্ষেত্রে প্রশাসক বসানোরও ক্ষমতা কমিশনের থাকবে।
পুনর্গঠিত পর্ষদকে কোম্পানিটিকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে দুই থেকে সর্বোচ্চ চার বছর সময় দেওয়া হবে। এ সময় পর্ষদ কীভাবে কোম্পানিটি লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করবে, তা দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে পূর্ববর্তী পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে কোম্পানিটির রুগ্‌ণ হওয়ার জন্য কারও দায় থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মামলা ও স্পেশাল অডিট করবে। কোম্পানি লাভজনক করা না গেলে, অন্য কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হবে বা অবসায়ন করে শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতায় যে কোম্পানিগুলো লোকসানে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে পর্ষদ পুনর্গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে দক্ষ ও যোগ্যদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জেড ক্যাটাগরির শেয়ারগুলোর বিষয়ে দেড় যুগ আগে ২০০২ সালের ১ আগস্ট বিএসইসি একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। ওই নির্দেশনায় এক বছর কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে থাকলে পর্ষদ পুনর্গঠনের বিধান রাখা হয়। তবে কয়েকটি কোম্পানি উচ্চ আদালতে রিট করলে তা কার্যকর হয়নি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

রেড ক্রিসেন্টের নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক উবায়দুল কবীর চৌধুরী

পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন