ফোন করে ডেকে নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীকে খুন

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এক আবাসন ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মাথা থেঁতলানো ছিল। বৃহস্পতিবার ফোন দিয়ে তাকে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে তারই নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচ তলায় লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ বলছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তার অনুসন্ধান চলছে।

নিহত আবাসন ব্যবসায়ীর নাম আবুল খায়ের (৫২)। তিনি সজীব বিল্ডার্স নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। বসুন্ধরা এফ ব্লকে নিজের ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। আবুল খায়ের হত্যার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা কর্মীরা সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে যেতে দেননি।

আবুল খায়েরের স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি ঢাকায় আসেন। প্রথমে ঠিকাদারদের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর নিজেই ঠিকাদারি করতেন। সাত-আট বছর আগে ছেলের নামে সজীব বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠা করেন। তার কোনো কার্যালয় ছিল না। নিজের বাসাতেই ব্যবসায়িক কাজ চালাতেন। নিজে আবাসন ব্যবসা শুরুর পর দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন। একটি বসুন্ধরার এফ ব্লকের যে বাসায় তিনি থাকেন সেটি। আরেকটি বাড্ডায়। বসুন্ধরা এম ব্লকের যে ভবনের নিচে তার লাশ পাওয়া গেছে সেটি ছিল তার তৃতীয় কাজ। ভবনটি দশ তলা ওঠার কথা ছিল। ফেব্রুয়ারিতে চারটি ছাদ ওঠার পর থেকে কাজ বন্ধ ছিল।

আবুল খায়েরের স্ত্রী রুপালী বেগম  বলেন, আবুল খায়ের বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাত খেয়ে শুয়ে ছিলেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তার মুঠোফোনে একটি কল আসলে তিনি ‘আসছি’ বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ‘কোথায় যাচ্ছেন’ জিজ্ঞেস করলে এম ব্লকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। রাতেও যখন ফিরছিলেন না তখন তার খোঁজ করি। তার সঙ্গে নগদ ৬০ হাজার টাকা, দুটি মুঠোফোন এবং একটি দামি ঘড়ি ছিল।

রুপালি বেগম বলেন, কি কারণে আবুল খায়েরকে হত্যা করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। কারও সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল কিনা তাও তার জানা নেই। এর বেশি রুপালি বেগম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এরপর তিনি প্রতিবেদককে বাসা থেকে চলে যেতে বলেন।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামান প্লেন, সকাল সাড়ে দশটায় আবুল খায়েরের পরিবারের লোকজন তার লাশ পাওয়ার খবর থানা-পুলিশকে জানায়। এরপর তারা গিয়ে উদ্ধার করেন। আবুল খায়েরের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তার মগজ বের হয়ে গেছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

ওসি বলেন, ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় সেখানে কোনো লোকজনও ছিল না। কারা তাকে ডেকে নিয়ে গেল, কারা হত্যা করল, যারা ডেকে নিয়েছিল তারাই হত্যা করল কিনা এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

আবুল খায়েরের ছোট ভাই নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারীর ধারণা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার ভাষ্যমতে যে ভবনটি নির্মাণ করছিলেন সেটির একজন অংশীদার ছিলেন আবুল খায়ের। বাকি নয়জন অংশীদারের সঙ্গে তার ঝামেলা চলছিল বলে মুঠোফোনে তাঁকে জানিয়েছিলেন। এই অংশীদারদের কেউ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

তবে ভবনের নয়জন অংশীদারের একজন আতিকুর রহমান। তিনি একটি বোয়িং হাউসের কোয়ালিটি এসিওরেন্স কর্মকর্তা। তার ভাষ্যমতে আবুল খায়ের শুধু বর্গফুট হিসেবে ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন। তিনি কোনো অংশীদার নন। তার সঙ্গে তাদের কোনো ঝামেলাও চলছিল না।

সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে যেতে না দেওয়ার বিষয়ে বসুন্ধরা কন্ট্রোল রুমের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল আলম বলেন, বসুন্ধরার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দিয়েছেন কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া যাবে না। তাই তারা কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। কি কারণে এই ব্যবস্থা তা তাদের জানানো হয়নি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা