হাটে গরুর সংকট, গরু নিয়ে টানাটানি

হাটে গরুর সংকট, গরু নিয়ে টানাটানি

পুরো একদিন এক রাত বাকি পবিত্র কোরবানির। এর আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট প্রায় গরু শূন্য। ক্রেতদের তীব্র চাপ থাকলেও হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা ছিল খুবই কম। যে কয়েকটি গরু ছিল তা নিয়ে রীতিমতো ক্রেতাদের মাঝে ছিল কাড়াকাড়ি। দাম কোনো ব্যাপার ছিল না গরু পাওয়াটাই ছিল সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই কে গরুর রশি ধরতে পারেন তাই নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতা। রাজধানীর আফতাবনগর, মেরাদিয়া, খিলগাঁও রেলগেট, জুরাইন ও গাবতলীসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাটে এই চিত্র দেখা গেছে।

তবে এর আগে গতকাল সারা দিন হাটগুলোতে ছিল ভিন্ন চিত্র। অনেক ব্যাপারি মহামারি করোনার কারনে বিক্রি নাও হতে পারে এই আতঙ্কে কম দামে গরু ছেড়ে দিয়েছেন। এমনই একজন হলেন মো. কালাম হোসেন। তিনি ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন গাবতলীর হাটে। জানালেন সব ব্যাপারি ও খামারির চেহারায় গরু বিক্রি না হওয়ার চাপা আতঙ্ক। আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। মহামারি করোনার কারণে যদি বিক্রি না হয় তা হলে ফেরত নিতে আবার টাকা লাগবে। এতগুলো গরুকে খাওয়াতেও অনেক খরচ। তাই কোনোটিতে সামান্য লাভ কোনোটিতে লাভ না কসে লসে ছেড়ে দিয়েছি।

হাট থেকে গতকাল দুপুরের পরে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন গরু কিনেছেন। বললেন, গত বছরের তুলনায় দাম একটু কম। তবে ব্যাপারি খুশিমুখে বিক্রি করেছেন। রাজধানীর অপর হাট আফতাব নগর থেকে গতকাল দুপুরে গরু কিনেছেন মো. মাকসুদুর রহমান গাজী ও মো. মোনির হোসেন। তারা জানালেন, ‘আগে আগে গরু কিনলাম। কোনো ঝুঁকি নিলাম না। চাঁদের রাতে অনেক সময় দাম পড়ে যায়। ব্যাপারিদের দুঃখ বেড়ে যায়। এটা ভালো লাগে না। আবার গরুর টান পড়ে গেলে আরেক যন্ত্রণা। তারা বললেন, যে গরু ৭৩ হাজার টাকায় কিনেছি সেই মানের গরু দেখলাম কেউ ৮৫ কেউ ৬৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। এবার হাটে দামের কোনো আগামাথা নেই।’

ব্যবসায়ী আনিসুজ্জান। থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। পরিচিত একজন গতকাল বিকালে মোবাইলে জানালেন হাটে গরুর টান। দ্রুত তিনি জুরাইন হাটে গেলেন। একটি গরুও কিনে ফেললেন তার ভাই মো. আসাদুজ্জামান। বললেন, আলহামদুলিল্লা গরু পেয়েছি এতেই খুশি। দাম তো আল্লার রাস্তায় কোরবানি। তবে গত বছর এই মানের গরু ৭০ বা ৭৫ হাজার টাকার বেশি ছিল না। রাতে যারা কেনার নিয়ত করেছেন তারা হয়ত পাবেন না। তার ধারণা সকালের পর আবার গরু আসবে।’

এদিকে মেরুলের মো. আমিন। তিনি গতকাল রাতে আফতাবনগর হাট থেকে গরু কেনার নিয়ত করেছিলেন। কিন্তু কিনতে পারেননি। কয়েকটি হাটে গুরে জানালেন শুক্রবার কিনবেন। দাম একটু কমতে পারে। তিনি জানালেন, খিলগাঁও রেলগেট হাটে গিয়ে দেখা গেছে পুরো হাঁটই প্রায় খালি। বাঁশ ও খুঁটিগুলোতে কোনো গরু নেই। যে কয়টি গরু রয়েছে সেগুলোর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। আফতাবনগর হাটে মাঝারি সাইজের গরুর দামও চড়া। বড় বড় গরুগুলোর ক্রেতা সেভাবে দেখা যায়নি। মাঝারি ধরনের প্রায় সব গরুই শেষ। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন গরু শেষ। তারা আরো গরু আনছেন।

এদিকে চট্টগ্রামেও একই অবস্থা ছিল বলে জানা গেছে। কোরবানির গরুর জন্য রাতে হাহাকার পড়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে মানুষ। ছুটছেন একবাজার থেকে অন্য বাজারে। কোথাও কাঙ্খিত গরুর দেখা মিলছে না। যে অল্প সংখ্যক আছে তার দামও চড়া। বাজারে গরুর চেয়ে ক্রেতা বেশি ছিল নগরের প্রতিটি হাটে। নোয়খালী ও ফেনীতেও প্রায় গরু শূন্য ছিল হাট।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন