গাজীপুরের শ্রীপুরে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের সময় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে অভিযান চালিয়ে তিন ঘণ্টা পর অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের মৃত আয়েত আলী মুন্সির ছেলে আবুল হোসেন বাদী হয়ে তাদের নামে মামলা দায়ের করে।
হামলায় পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক, একজন কনস্টেবল, একজন আনসার সদস্যসহ সাতজন আহত হন। আহতরা হলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল খোরশেদ আলম, আনসার সদস্য সুকুমার রায়, আবুল হোসেন রনি, ফয়সাল আহমেদ, আবুল কালাম ও অমর বেপারী। তারা কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার, হোমনা ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা। তারা বিদেশে লোক পাঠানো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আহতদেরকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রৌশনী (৪০), নাজমুল হকের স্ত্রী মনীষা মনি (২৫), গাজীপুর সদর উপজেলার নয়নপুর (দিঘলা) গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ (১৮), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাহোড়া গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে তাজুল ইসলাম (২৪) ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সোলায়মানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন ও উদ্ধারকৃতদের দেয়া ভাষ্যমতে, উদ্ধারকৃৃত আবুল হোসেন রনি বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকেন। নোয়াগাঁও গ্রামের ওই পরিবারের দুজনকে দুবাই পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই লক্ষাধিক টাকা নেন। করোনার কারণে বিদেশে পাঠাতে না পারায় রৌশনীর পরিবার তাদের টাকা ফেরত চান। আবুল হোসেন রনি কিছু টাকা ফেরতও দেন। আরও লোক পাঠানোর কথা বলে খবর পাঠিয়ে তাদেরকে কুমিল্লা থেকে শ্রীপুরের নোয়াগাঁও গ্রামের রৌশনীর স্বামী মৃত আব্দুর রহমানের বাড়িতে আসতে বলেন।
গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে আবুল হোসেন রনি ও মালেক নামে দু’জন নোয়াগাঁও রৌশনীর স্বামী মৃত আব্দুর রহমানের বাড়িতে আসেন। পরে তাদেরকে ওই বাড়িতে আটক করে মারধর করে বাড়ি থেকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য বলেন। পরে তারা ফোনে যোগাযোগ করলে বিষয়টি মীমাংসার জন্য কুমিল্লা থেকে তাদের আরও তিনজন শুক্রবার শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে আসেন। পরে তাদেরকেও আটক করে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য থেকে মালেক নামে একজন পালিয়ে রক্ষা পান। আটককৃতদের মধ্য থেকে একজন কৌশলে ট্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করতে যায়। এসময় পুলিশ দেখে রৌশনীর বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। পরে তারা পুলিশ সদস্যদের মারধর করে একটি শটগান ও আট রাউন্ড গুলিভর্তি একটি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়।
পরে শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। ওই রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলি, তিন পুলিশ সদস্য ও আটককৃত চারজনকে উদ্ধার করেন।
ওসি জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত পাঁচজন, চিহ্নিত ২৪ জন ও অজ্ঞাতনামা কমপক্ষে ১৫ জনসহ ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন। আহত উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম ওই মামলার বাদী। আটক করে রাখার ঘটনায় উদ্ধারকৃত আবুল হোসেন রনি গং আরেকটি পৃথক মামলা করেছেন।