ফেনী: ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ নামকরা চিকিৎসকরা বক্ষব্যাধি, কিডনি, গাইনি, শিশু, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও চক্ষুসহ প্রায় সব ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন মাত্র ২০ টাকায়। গরিব ও অসহায়দের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে ওষুধ।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ফ্রি মেডিক্যাল চেকআপসহ নিয়মিত চিকিৎসা সুবিধা। প্রান্তিক জনপদের মানুষদের এমন সেবা দিয়ে যাচ্ছে ওয়াহিদুর রহমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চক্ষু হাসপাতাল।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রামে নিভৃত পল্লিতে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। অজপাড়াগাঁয়ে মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য ইউনাইটেড ট্রাস্টের এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে স্থানীয়দের।
হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর ও মনোরম গ্রামীণ পরিবেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। অপারেশেনের জন্য চক্ষু ইউনিটের বেডে অপেক্ষা করছেন রোগীরা। ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাড়াও এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে ছুটে আসছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই, রামগড়, ফটিকছড়ি, ফেনী সদর, ফুলগাজী, পরশুরাম ও সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এখানে স্বল্পমূল্যে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থাকায় শুধু ফেনী জেলার নয়, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার রোগীরাও ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নুর আহমেদ নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন চোখের সমস্যায় ভিগছেন। আগের চিকিৎসক বলেছেন ছানি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু সেই সামর্থ তার কাছে নেই, আর সে কারণেই এখানে এসেছেন।
তিনি বলেন, এখানে খুব অল্প টাকায় ছানি অপারেশন করা যাবে সেটা শুনেই এসেছি।
কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রেজিস্টার ও কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. ইফ
তেখারুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামের এই দাতব্য হাসপাতালটিতে এসেছি গরিব-অসহায় মানুষদের সেবা দিতে, এখানে রোগী দেখে তৃপ্তি পাই।
ঘোপাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, গ্রামীণ জনপদে এমন সেবাধর্মী চিকিৎসাকেন্দ্র বিরল। উদ্যোক্তাদের এমন উদ্যোগে উপকৃত হচ্ছে স্থানীয় গরিব-অসহায়সহ সব শ্রেণির মানুষ।
হাসপাতালটির স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. ফয়সাল ভূঁঞা জানান, অত্যাধুনিক ও মানসম্মত যন্ত্রাংশ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম দ্বারা মাত্র ৬৭৫ টাকায় চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। ৩৭৫টাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ৩০০টাকা অপারেশন রেজি: মোট ৬৭৫ টাকা। (নরমাল লেন্স, থাকা, ডাক্তার ফি, অপারেশন, ওটি মেডিসিন সব এই খরচের আওতায়) বাকি সব খরচ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ বহন করে থাকে।
তিনি জানান, দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপের একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা ইউনাইটেড ট্রাস্ট। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এই সংস্থাটি তাদের বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদেরকে জড়িত রেখেছে। সমাজের গরিব ও বঞ্চিত জনসংখ্যার দুর্দশা হ্রাসের প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে তারা।
ইউনাইটেড ট্রাস্টের ট্রাস্টি খন্দকার মইনুল আহসান শামীম তার নিজ গ্রামে এই দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনাইটেড ট্রাস্টের অর্থায়নে এখানে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
মো. ফয়সাল ভূইঁয়া জানান, ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রামে ওয়াহিদুর রহমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রটি (আউটডোর সেবা ও চক্ষু হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠিত হয়। তেতলা বিশিষ্ট ২১ শয্যার এ হাসপাতালে রয়েছে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড। নিচতলায় আউটডোর সেবা এবং ১ম ও ২য় তলায় চক্ষু হাসপাতাল।
তিনি জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগ সাধারণ রোগীদের জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহে ছয়দিন সব ধরনের রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আউটডোর সেবায় বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক মাত্র ২০ টাকায় ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। রয়েছে নারীদের আল্ট্রাসহ গাইনি সেবা। শিশুদের জন্য রয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এখানে রয়েছে রোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক প্যাথলজি ল্যাবরেটরি। এর খরচ বাজার মূল্য থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ কম।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াও, এখানে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যারা সবসময় সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে বদ্ধপরিকর। বিনামূল্যে সেবাদান, ও সুলভ মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সু-ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এছাড়াও গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য রয়েছে যাকাত তহবিল থেকে বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা।
মোর্শেদ আলম নামের স্থানীয় এক শিক্ষাবিদ ও সংগঠক জানান, এমন উদ্যোগের কারণে এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন। গ্রামের অসহায় মানুষরা সেবা পাচ্ছে। আমরা চাই এ হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ পাক।