চীনে এক যাজক অভিনব কায়দায় স্মরণ করছেন করোনাভাইরাসকালে মৃতদের। চীনের দাওইজম বা তাওইজম পাঁচটি স্বীকৃত ধর্মের একটি। বর্তমানে চীন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন এই ধর্মে বিশ্বাসীরা।
চীনের শানদং অঞ্চলের এক তাও যাজক সেই অঞ্চলে করোনাভাইরাসকালে যারা মারা গেছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষায় এক অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
শানদং অঞ্চলের একটি তাও মঠে গেলে দেখা যাবে সারি সারি স্মৃতিফলক। মোট ৫৫৮টি স্মৃতি-ফলকের ওপর লেখা আছে মৃতের নাম ও জন্মস্থান। এভাবেই করোনাকালে নিহতদের মনে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন তাও যাজক লিয়াং শিংইয়াং।
তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রকৃত মৃত্যু তখন হয়, যখন গোটা বিশ্ব তাকে ভুলে যায়। আমার মতে, ধর্মবিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, সবার আত্মাই স্মরণ করার যোগ্য।’’
২০১৫ সালে তাও ধর্ম গ্রহণ করেন লিয়াং। পাহাড়ি এলাকায় সবুজে ঘেরা মঠের এই ফলক চীনে ব্যতিক্রমী। শুধু তাই নয়, লিয়াঙের বিশ্বাস, এই সংকলন হয়ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাও বা বৌদ্ধ স্মৃতিফলকের সংকলন হতে পারে।
করোনা সংক্রমণের কারণে চীনে প্রাণ হারিয়েছেন মোট চার হাজার ৬৩৪জন। উহান অঞ্চল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কবলে প্রাণ হারিয়েছেন যারা, তাদের স্মৃতিতে চীনে এই তাও ফলক ছাড়াও আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো জাদুঘরে বিশেষ বিভাগ চালু হয়েছে, যেখানে আক্রান্তের পরিবারের পক্ষে নানা জিনিস দান করা হয়েছে।
লিয়াং জানান, শানদং অঞ্চলের এই তাও মঠের ফলকে যাদের নাম আছে, তাদের মধ্যে খুব কমই করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে বয়সজনিত বা অন্যান্য রোগের কারণে। কিন্তু প্রত্যেকেই লিয়াঙের মতে ‘স্থানীয় হিরো’।
লিয়াং বলেন, ‘‘শারীরিক মৃত্যুর পরেও এভাবে প্রিয়জনকে দেখতে পারা, বিশেষ করে মৃত্যুর পরেও পরিবারের সদস্যদের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারার এই সুযোগ আমার কাছে সবচেয়ে শান্তির।
স্থানীয়দের অনেকেই মঠে আসেন নিরিবিলিতে মৃত প্রিয়জনদের স্মৃতির সান্নিধ্য পেতে। তবে কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, লিয়াং এই কাজ করে তাও ধর্মের প্রচার করতে চান। আবার কেউ কেউ মনে করেন, টাকার লাভে লিয়াং এই কাজ করছেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লিয়াং জানান, স্মৃতি ফলক গড়তে দুই লাখ ইউয়ান (প্রায় ২৫ লাখ টাকা) নিজের পকেট থেকে দান করেছেন। সোশাল মিডিয়াতেও ছড়াচ্ছে লিয়াঙের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত। তবে নিজের কাজে অনড় তিনি।