চট্টগ্রাম: সদ্য যোগদান করা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার দেশ, পূণ্যভূমি। আমি ইতোপূর্বে এখানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
আমাকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরবাসীর সেবা করার। আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন- আমাদের ইন্সপেক্টর জেনারেল মহোদয় দুর্নীতি, মাদকসহ পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সিএমপি এর বাইরে বিট পুলিশিং, কোয়ালিটি ইনভেস্টিগেশন কাজ করবো। আমরা পরিকল্পনা করেছি- প্রশিক্ষণ বাড়ানো, সুপারভাইজিং নিবিড় করা, মনিটরিং বাড়ানো, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে তদন্তের মান উন্নয়ন।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত করোনাকালীন সময়ে সিএমপির প্রতিটি সদস্য মানবিক পুলিশিং করে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমার পূর্ববর্তী সহকর্মী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বে দিয়েছেন। আমি সিএমপির যেসমস্ত অর্জন রয়েছে তা ধরে রাখার চেষ্টা করবো। যে সকল ক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ আছে সেগুলোকে উন্নয়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমার সহকর্মীরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মান ধরে রাখার জন্য। সিএমপিকে মর্যাদাসম্পন্ন, জনবান্ধব ও মিডিয়াবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।
সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, পুলিশি সেবার মূল কেন্দ্র হলো থানা। থানাকে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সেবা দেওয়ার সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করবো। থানার কর্মকাণ্ডের কিছু অংশ ডিজিটালাইজেশন করবো। থানায় আগত সেবাপ্রার্থীরা যাতে প্রয়োজনীয় সেবা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করবো।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেফ সিটি কনসেপ্ট রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেও রয়েছে। এলাকাভিত্তিক এটি চালু রয়েছে। সীমিত জনবল নিয়ে হলেও সিএমপিতেও আমরা এটি শুরু করতে চাই।
সিএমপিতে একটি মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি বলেন, বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকর করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস দমন, জঙ্গিবাদ দমন, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে এটি ভূমিকা রাখবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, আমার কাজ আমার হয়ে কথা বলবে। আমি এখন কিছু বলতে চাই না। আপনারা আমার কাজ অবজার্ভ করুন।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। আমরা ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট নিয়ে কাজ করি। এনফোর্সমেন্টের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাচ্ছি। যেসব মোড়ে ট্রাফিক জ্যাম বেশি হয় সেসব মোড় চিহ্নিত করে দুর্ভোগ লাঘবে পরিকল্পনা করছি। চট্টগ্রামে নানা জায়গায় উন্নয়ন কাজ চলছে, এর ফলেও ট্রাফিক জ্যাম হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।
থানা এলাকায় দালালের আনাগোনার বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, থানা এলাকায় আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবো। সেটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। থানা একটি পাবলিক অফিস, এখানে যে কেউ আসতে পারে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য রাখবো, পুলিশি কাজে ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ যাতে না হয়।
নগরে কিশোর গ্যাং ও মাদক নিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, মাদকের মাধ্যমে নানা অপরাধ হয়। প্রতিটি মাদকের আগে ও পরে নানা লিংকআপ থাকে। আমরা শুধু যিনি মাদক বহন করবেন তাকেই নয়, এর পেছনে যারা থাকবেন তাদেরও আইনের আওতায় আনবো। কিশোর গ্যাং একটি বাইপ্রোডাক্ট সমস্যা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকে। প্রতিটি কিশোর গ্যাংয়ের মাথায় একজন ছাতা ধরে থাকেন, শেল্টার দেন। এরকম যারা থাকবেন তারাও পার পাবেন না। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। সিএমপিতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, উপ-কমিশনার (সদর) আমির জাফরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।