চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের মুন্সিরহাট থেকে উভারামপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, ভোগান্তিতে পড়ছেন পাঁচ গ্রামের সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালুবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। হাঁটাচলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়কটি। ফলে আশপাশের পাঁচটি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুব শিগগিরই সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরেজমিনে মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ থেকে উভারামপুরের পাটওয়ারী বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে অসংখ্য গর্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থার কারণে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষজন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানিয়েছেন তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। সড়কের দুই পাশে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি কওমি ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং একটি মাঝার শরিফ। এছাড়া স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী মুন্সিরহাট বাজার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর এবং জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে কাইতাড়া, উভারামপুর, সমেশপুর, বাশারা ও সুরঙ্গচাল গ্রামের মানুষ সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর বলেন, এই সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করা খুব কষ্টসাধ্য। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রোগী বহনের সময় ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রুত সড়কটি পাকা করার দাবি জানাচ্ছি।
কাইতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন হায়দার বলেন, সড়ক নির্মাণের পর দীর্ঘদিন মেরামত হয়নি। তবে তখনও চলাচলের উপযোগী ছিল। কিন্তু গত আট-দশ বছরে এলাকার কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীর ট্রাক চলাচলের ফলে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক ডুবে যায়।
একই এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, একবার টেন্ডার হলেও ঠিকাদার এসে বলেন পাকা সড়কের কোনো চিহ্নই নেই। ফলে কাজ আর এগোয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে অনেক জনপ্রতিনিধি কাজের আশ্বাস দিলেও পরে আর কেউ খবর নেয়নি।
উভারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা হলো, প্রথমে প্রশাসনকে বালুবাহী ট্রাক বন্ধ করতে হবে। কারণ তারাই মূলত সড়ক ধ্বংসের জন্য দায়ী। এখন যদি নতুন করে সড়ক পাকা হয়, ট্রাক চললে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। বর্ষাকালে এই পথে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়।
উটতলী নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালির কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ময়লা ঢুকে পড়ে, ফলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন বয়সী মানুষ অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভোগেন। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে সড়ক নির্মাণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
মুন্সিরহাট বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. কাইয়ুম বলেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে এটি সংস্কার হয়নি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম কষ্টে যাতায়াত করে। এখানে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারে না। একজন রোগীকে নিয়ে চলাও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানাচ্ছি।
উভারামপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ থেকে উভারামপুর পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে রোগীদের সঙ্গে আত্মীয়রা আসতেও চান না। আত্মীয়তা রক্ষা করাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
ইসমাইল তালুকদার খোকন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ বহু বছর ধরে অবহেলিত। ২০০৯ সালে বহু অনুরোধের পর সড়ক নির্মিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কেউ আর সংস্কারে এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা ও জেলা কার্যালয়ে আমরা বারবার জানিয়েছি, এখন শুধু একটাই দাবি—সড়কটি দ্রুত পাকা করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির বলেন , অর্থ সংকটের কারণে অনেক সময় সড়ক সংস্কার সম্ভব হয় না। ইউনিয়ন সড়কের পর গ্রামীণ সড়কের নির্মাণ হয়। তবে সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে খুব দ্রুত প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।