ইলিশে সয়লাব বরিশাল

ইলিশে সয়লাব বরিশাল

সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সাগরে আহরিত ইলিশে গত ৩ দিন ধরে সয়লাব বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম। হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের দরপতন হয়েছে। এতে জেলে এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যদিও খুচরা পর্যায়ে কম দামে ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অভ্যন্তরীণ নদীর কিছু ইলিশ থাকলেও পরিমাণে কম, দাম বেশী।

ইলিশ আড়তদাররা বলছেন, ভরা মৌসুম হওয়ায় ইলিশের আমদানি বেড়েছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাকী ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই কম দামে ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলে ও আড়তদারদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে ইলিশ রপ্তানি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

অভ্যন্তরীণ নদ-নদী এবং সাগরে সারা বছরই কম বেশী ইলিশ আহরিত হয়। শ্রাবন-ভাদ্র-আশ্বিন এই ৩ মাস ইলিশের প্রধান মৌসুম। এ বার ভরা মৌসুমের শুরুতে নদী-সাগরে ছিল ইলিশের আকাল। মৌসুম শুরুর দেড়মাস পর মধ্য ভাদ্র থেকে নদী-নদী আর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। গত ৩ দিন ধরে আড়াই থেকে ৩ হাজার মণ ইলিশ আসছে মোকামে। সব শেষ বৃহস্পতিবারও প্রায় ৩ হাজার মণ ইলিশ এসেছে মোকামে। এর মধ্যে নদীর ইলিশ অল্প-সাগরের ইলিশ বেশী।

স্থানীয় চাহিদা মোটানোর পরও উদ্বৃত্ত থাকা ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই বরিশালে। এ কারণে দরপতন হয়েছে ইলিশের।

আড়তদার মো. জহির সিকদার জানান, মোকামে অন্তত ৩ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। যার বেশীরভাগ সাগরের। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পরও অবশিষ্ট ইলিশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একসাথে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ আসায় দরপতন হয়েছে।

আড়তাদার মো. নাসির উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার দেড় কেজি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ ৩৮ হাজার, ১ কেজি ২শ’ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ৩২ হাজার, কেজি সাইজের প্রতিমণ ৩০ হাজার, রপ্তানিযোগ্য এলসি সাইজ (৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) ২৬ হাজার, ভেলকা (৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম) সাইজ প্রতি মণ ২২ হাজার এবং গোটলা সাইজ ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকা মণ দরে।

পাইকারি বাজারে ইলিশের দর পতন হলেও খুচরা ক্রেতারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রায় আগের দামেই ইলিশ কিনতে হচ্ছে তাদের।

জেলা মৎস্য আড়তদার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, এত পরিমাণ ইলিশ আসছে, রাখার জায়গা নেই। সংরক্ষণের জন্যও নেই কোন হিমাগার। কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে ইলিশ। এতে যারা সাগর-নদীতে ইলিশ আহরণ করে সেই জেলে ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছে। জেলে ও ব্যবসায়ীরা মৌসুমের এই সময়টার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে। অথচ ভরা মৌসুমে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ইলিশের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে জেলে ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের কবল থেকে বাঁচাতে অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে ইলিশ উৎপাদন এবং আহরণ বেড়েছে। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আসছে। তার আগ পর্যন্ত সাগর-নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে। এখন সাগরের ইলিশ বেশী আসছে। কয়েকদিন পর নদীতেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রচুর ইলিশ আহরিত হওয়ায় তৃনমূল পর্যায়ের জনগণও খেতে পারছে। এটা ভালো দিক। তবে জেলে-ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মূল্য না পাওয়া দুঃখজনক। দেশীয় চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত থাকা ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা যায় কি কিনা সে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করবেন তিনি।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন