আবুল কালাম আজাদ,রাজশাহী: বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন কন্ট্রোলারদের অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট এবং ভাতাসহ আর্থিক সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে ২৫ নভেম্বর সোমবার থেকে দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির পাকশী রেলওয়ে বিভাগের সভাপতি কন্ট্রোলার মো. আব্দুল হামিদ জানান, রেলওয়ের মহাপরিচালক জনাব,সরদার শাহাদত আলী ২৪ নভেম্বর রাতে তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা বলেন,তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক ও সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি রেলওয়ে উপদেষ্টার সাথে কথা বলে সমাধানের চেস্টা করবেন।এজন্য তিনি ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান।তার আশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন আপাতত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছি।
তিনি আরো বলেন,ট্রেন কন্ট্রোলার বিভাগটি রেলওয়ের একটি স্পর্শকাতর সেকশন।কন্ট্রোলের দিকনির্দেশনা ছাড়া ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।আমরা আন্দোলনে যেতে চায়না,কিন্তু কতৃপক্ষ তাদের যৌক্তিক দাবি থেকে তাদের বাঞ্ছিত রেখেছে।
তিনি আরো বলেন,আমরা সমাধানের পক্ষে তবে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতিসহ বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন।
ট্রেন কন্ট্রোলার মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা বছরে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা কর্মস্থলে দয়িত্ব পালন করায় ৪টি অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট এবং ভাতা পেতাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২০২২ সালের ২৪ জুলাই অফিস আদেশের মাধ্যমে তা বাতিল করে। পরবর্তীতে আমরা পূর্বের সকল সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়কে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেছি। আগেও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু রেলওয়ের পক্ষ হতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এক মাসের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করতে অনুরোধ করেন।’
‘ঊর্ধ্বতনদের প্রজ্ঞাপন জারি করার সর্বোচ্চ চেষ্টার সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ট্রেন কন্ট্রোলারস এসোসিয়েশন এক মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অফিস আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। তাই আমরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড়।’-যোগ করেন তিনি।
আর এটা না হলে রেলের অন্যান্য বিভাগের মতো সাপ্তাহিক ছুটি, সুনির্দষ্ট অফিস টাইম, উৎসব ছুটি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চান তারা। অর্থ বিভাগের দু’টি ‘কালো’ অফিস আদেশ বাতিল করে কন্ট্রোলারদের পূর্বের সকল সুবিধা পুনর্বহাল করার দাবি জানান তিনি।
জানা গেছে, ট্রেন কন্ট্রোল অফিস বাংলাদেশ রেলওয়ের মূল চালিকা শক্তি। ট্রেন পরিচালনা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমসহ জরুরি নির্দেশনা ট্রেন কন্ট্রোল অফিসের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটিই রেলের একমাত্র অফিস যা বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। কোনো পরিস্থিতিতে কন্ট্রোল অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হয় না।
১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কন্ট্রোলে কর্মরত কন্ট্রোলারদের দায়িত্বকে কঠিন প্রকৃতির কষ্টসাধ্য দায়িত্ব বলে স্বীকৃতি দিয়ে মূল ইনক্রিমেন্ট বেতন স্কেল-১৮৫-৩১৫ RPS) এর ওপর ৩০ টাকা অতিরিক্ত ভাতা অফিস আদেশের মাধ্যমে ঘোষণা করে।
এরই ধারাবাহিকতার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রথম ৩০ টাকার পরিবর্তে তিনটি অগ্রীম ইনক্রিমেন্ট দেয় এবং ১৯৮০ সাল থেকে ৪টি অগ্রীম ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ ‘বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে এবং তার ওপর সকল ভাতা দিয়ে আসছিলো।
অন্যদিকে রেলওয়েতে কর্মরত অন্যান্য কর্মচারীরা যেমন লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই, এ্যাটেনডেন্টরা মাইলেজ নামে অতিরিক্ত সুবিধা পান। যা একই প্রতিষ্ঠানের আইনে দুরকম বাস্তবায়ন ও বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে বলে জানান কন্ট্রোলাররা।
কন্ট্রোলার অফিসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মামুনুল হক বলেন, ‘কন্ট্রোলাররা কর্মবিরতিতে গেলে রেল চলাচলে অবশ্যই বিঘ্ন ঘটবে। তাদের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। রেলওয়ে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক আছে এটা নিয়ে কাজ চলছে। তবে এটা রেলের আওতাভুক্ত না হওয়ায় রেলপথ মন্ত্রণালয় এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এটা অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এটার জন্য সময় দিতে হবে। আমরা ট্রেন কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছি।