নিউজ ডেস্ক : আইনি সহায়তার দ্বায়িত্ব নিলেন মানবাধিকার কমিশন। পুলিশ অভিযুক্ত ঐ গৃহকর্তী দিনাত জাহান আদর (২১) কে গ্রেফতার করেন। বারো বছর বয়সী কল্পনা নামের মেয়েটি ঐ বাসায় কাজ করতো ৫ বছর যাবত।
শনিবার দিবাগত রাতে কয়েকজনের সহযোগীতায় সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে (সোমবার) রাত পৌনে ৪ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণের রেড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ঐ ইউনিটের প্রধান, চিকিৎসক মো: নাসির উদ্দিন,মেয়ে টি
সম্পর্কে বলেন, তার সমস্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে যে পরিমান আঘাত পোড়া ক্ষত হয়েছে। তা কোন একদিনের আঘাত নয়,দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সময়ের এ সমস্ত আঘাত। বিনা চিকিৎসায় অনেক স্থান শুকিয়ে গেছে। আবার অনেক স্থানে গভীর ক্ষত রয়েছে। তার সামনের দিকে চারটি দাদ (নেই) ভাঙ্গা রয়েছে। অনেক স্থানে ইনফেকশন হয়েগেছে।
বর্তমানে তার যে অবস্থা,তার সেরে উঠতে প্রায় দুইমাস সময় লাগতে পারে। নির্যাতনের কারনে, সে কিছুটা মানসিক ট্রমায় রয়েছে। মেয়েটির এ নির্মম নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এর চেয়ারম্যান জনাব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বার্ণ ইউনিটে আসেন, শিশুটির সাথে কথা বলেন তার চিকিৎসকের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। শিশুটির মায়ের সাথে কথা বলেন।
সে সময়ে সে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম সহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও মানবাধিকার কমিশনের মো: সেলিম রেজা হাবিব সহ কয়েকজন কর্মকর্তা। হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান , শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় খরচ হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব, ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেনমেয়েটির নির্মম নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে, তিনি বলেন, যারা এ সমস্ত ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যাবস্থা নিতে হবে।
তিনি ভাটারা থানার ওসি কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি তৎক্ষানিক আইনগত ব্যাবস্থা নিয়েছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এর মামলা নিয়েছেন। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সুজন গ্রামের শহিদ মিয়া, মা আফিয়া বেগমের মেয়ে কল্পনা । পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে কল্পনা ছিল ৫ম।
শিশুটির মা আফিয়া বেগম বলেন,গত ৫ বছর আগে, তার এক খালার মাধ্যমে তাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ঐ বাসায় কাজে দেন। পরে ১০ হাজার দেয়ার কথা ছিল। শেষ তিন মাসের বেতন পান নি তারা। টাকা পাঠাতো মেয়েটির বাবা-র কাছে।
আপনার মেয়ে কি কখনো এ সব নির্যাতনের কথা জানায় নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তার মা বলেন,মাঝে মধ্যে ফোনে মেয়ের সাথে কথা হতো গৃহকর্তীর মোবাইলে । এখন জানতে পেরেছি সে সময়ে কথা বলার সময়ে গৃহকর্তী সামনে থাকতো, তাই ভয়ে নির্যাতনের কথা বলতে পারতো না।
আহত কল্পনা জানিয়েছেন, দিনাত জাহান আদর (২১), ভাটারা থানা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতো।
সাত তলা ভবনের ২য় তলার ফ্ল্যাটে থাকতো। সে বাসায় ঐ গৃহকর্তী একাই থাকতেন। তিনি একটি বিড়ালও পালতেন।
ঐ বাসায় কর্তীর এক বয়ফ্রেন্ড আশা যাওয়া করতো সব সময় ।
নির্যাতনের শিকার মেয়েটি আরও জানায়, বিভিন্ন কাজ না পারার, বা ভুল করার অজুহাতে তাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হতো। দেয়া হতো হেয়ার স্টেস্ট মেশিন দিয়ে ছেঁকা, পিটানো হতো লাঠি দিয়ে।
ঐ বাসায় কর্তী রান্নাবান্না করতেন না। বাহির থেকে খেয়ে আসতো আবার নিয়েও আসতেন। মাঝে মধ্যে কর্তীর ভাই আনার খাবার নিয়ে আসতো। আহত শিশু টি নিজের খাবার নিজেই রান্না করে খেতো। ঐ কর্তী ছাড়া আর কেউ বা কর্তীর বয়ফ্রেন্ড মারধর করতো কি-না, জানতে চাওয়া হলে, শিশুটি জানায়, না, তিনি কখনো মারধর করতেন না।
যে ভাবে তাকে উদ্ধার করা হয়।
ঐ বাসায় কর্তীর বিড়াল পালতেন, বিড়াল টিকে মাঝে মধ্যে চিকিৎসা দেয়া হতো। জানাযায়, বিড়ালটি কে চিকিৎসার জন্য বাহিরে নিয়ে যায় কল্পনা সহ কর্তীর লোক। তখন এ নির্যাতনের খবরটির প্রথম জানাজানি হয়। তার মুখমন্ডল সহ শরীরের বাহ্যিক নির্যাতনের যখম চোঁখে পরে অনেকের। তখন মেয়েটির কাছে জানতে চায়,কেউ কেউ। তখন মেয়েটি সেই নির্যাতনকারীর হাত থেকে বাচানোর সাহায্য কামনা করে, বাসায় চলে যায় ।
পরে বিষয়টি কোন একজন নির্যাতিত গৃহকর্মীর কিছু অংশ ভিডিও করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীর কাছে পাঠান। তখন বিষয়টি পুলিশ সংবাদ পান। পরে ভাটারা থানার পুলিশ ঐ বাসায় অভিযান চালিয়ে গৃহকর্মী কে উদ্ধার করেন। এবং কর্তীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
পুলিশ সুত্রে জানাগেছে, কর্তী দিনাত জাহান আদর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পড়াশোনা করতো, তবে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। তার বাবা মা ধানমন্ডি তে থাকেন।