নিউজ ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছেন কলকাতা হাইকোর্ট। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য সুন্দর দাস এবং কৌস্তভ বাগচী—এই তিন আইজীবীর পৃথক আবেদনের ভিত্তিতে তিনটি মামলা গ্রহণ করে হাইকোর্ট।আদালতের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বে ঠিক হবে মামলাগুলো কোন বেঞ্চ শুনানি হবে।মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) হলফনামা আকারে জমা দিয়েছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। হলফনামায় আইনজীবী আবেদন করেছেন, আদালত যেন মুখ্যমন্ত্রীকে সাবধান করেন।এ বিষয়ে বিচারপতি বলেছেন, এর আগেও হাইকোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছেন। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, তিনি (মমতা) বারবার বিভিন্ন ভোট প্রচরনায় বিচারপতি, বিচার প্রক্রিয়া, বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন। সেই জন্যই এই আবেদন।প্রসঙ্গত, সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলই বাতিল করেছেন কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ ২০১৬ সালে যারা চাকচি পেয়েছিলেন, তাতে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশের শিক্ষক এবং অশিক্ষক মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি গিয়েছে। শুধু চাকরি বাতিল নয়। সবাইকে শতকরা ১২ শতাংশ সুদে বেতন ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।যদিও এরপরে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) জানিয়েছে, সবাই অযোগ্য নয়। ৫ হাজারের কিছু বেশি অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন বলে তারা দাবি করেছে। হাইকোর্টের বক্তব্য, বাতিলের পর এসব বলছে। কিন্তু এর আগে তিন বছর ধরে বহুবার বলা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করে দেওয়া হয়নি। যে কারণে দুধ আর পানি আলাদা করতে না পারায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে হাইকোর্টকে।এদিকে নিয়োগ বাতিলের রায়কে ‘বেআইনি’ বলে চিহ্নিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার ইতোমধ্যেই এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে গিয়েও এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন।বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়ার প্রচারে গিয়েও রায় প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, টিচারদের চাকরি খেয়ে নিল, যেন মগের মুলুক। আমি আইনটা একটু আধটু জানি। আমি নিজেও একজন আইনজীবী। আমিও আইনের ছাত্রী ছিলাম, এখনও বার কাউন্সিলের মেম্বার। আমি জাজেস নিয়ে কথা বলব না। কিন্তু জাজমেন্ট নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার আছে। ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি চলে গেল, তাদের পরিবার না খেতে পেয়ে মারা যাবে। বলছে, টাকা ফেরত দিতে হবে। এত বড় সাহস! হাইকোর্টের রায় বিজেপি দ্বারা প্রভাবিত বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনজীবীরা আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলেছেন। উল্লেখ্য, অভিযোগকারী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পেশায় আইনজীবী হলেও বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কৌস্তভ বাগচী কংগ্রেস করেন।