নিউজ ডেস্ক:::: বিদ্যমান বিধি-বিধান ভেঙে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বৈদেশিক ক্যাটাগরিতে ১০নং সেক্টরের ৩০১ নম্বর রাস্তার ৩৪নং প্লটটি বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ ধরণের অনিয়ম করা হয়েছে। দুই দশক আগে মাসুম আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তির বরাবরে বরাদ্দ করা এ প্লটটির প্রথম কিস্তি দেওয়ার পর প্রায় ১৫ বছর কোন কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি। রাজউকের বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, উল্লিখিত প্লটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। ইতোমধ্যে প্লটটি যার নামে বরাদ্দ হয়েছিলো সে ব্যক্তি ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তির নামে রাজউক থেকে কোন ধরণের দালিলিক প্রমাণাদি ইস্যু করা না হলেও প্রায় ১৫ বছর পর নতুন করে কিস্তির টাকা গ্রহণ ও তার উত্তরসূরীদের নামে নামজারির মতো তুঘলকি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। অথচ নির্ধারিত সময় কিস্তি পরিশোধ না করা প্লট গ্রহীতাদের শত শত আবেদন আইনি জটিলতায় বিবেচনায় নিতে পারেনি রাজউক। স্মরণকালের ইতিহাসে এটিই প্রথম যে প্লটের বরাদ্দ বাতিল হওয়ার পর পুনর্বহাল ও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের নামে নামজারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ রাজউক ভবনে চলছে জোর গুঞ্জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পূর্বাচলের এ ১০ কাঠা প্লটের বাজারমূল্য কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা। এ প্লট বরাদ্দের পিছনে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিষয়টিও সবার মুখে মুখে।
রাজউকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ মাসুম আব্দুল মজিদের আবেদনের পর ১০নং সেক্টরের ৩০১ নম্বর রাস্তার ৩৪নং প্লটটি বৈদেশিক ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করে ২০০৬ সালের ৩১ মার্চ দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি যথাক্রমে ৩ বছর উপ-পরিচালক (এস্টেট) এবং ৭ বছর সদস্য (এস্টেট) মঞ্জুর করতে পারেন। এরপরও টাকা পরিশোধ না করলে তা সয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। এই প্লটের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এরই মধ্যে ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি বরাদ্দ গ্রহীতা মাসুম আব্দুল মজিদ মৃত্যুবরণ করেন। এ পর্যন্ত মাসুম আব্দুল মজিদের নামে রাজউক থেকে কোন চূড়ান্ত দখলপত্র ইস্যু করা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তার মৃত্যুর পর উক্ত প্লটটিতে উত্তরাধিকারীদের কোন ধরণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এরপরও মাসুম আব্দুল মজিদের বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে মাহবুবা জামান পলি, মাহমুদ মাসুম, খালিদ মাসুম এবং বোরহান উদ্দিন নাবিলের নামে সংশোধিত বরাদ্দপত্র জারি করা হয়।
রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরণের কিস্তি পরিশোধ না করে সয়ংক্রিয় বাতিল হওয়া আবেদনের সংখ্যা শত শত রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়ার কোন নজির নেই। এখন এ বরাদ্দের ফলে শত শত আবেদনকারী এটাকে নজির হিসেবে দাড় করিয়ে নিজেদের অন্যায় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজউকের বিরুদ্ধে আদালতের স্মরণাপন্ন হবে। এতে করে রাজউক একটি বড় ধরণের ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্লটটি রাজউক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান বাজারমূল্যে বিক্রি করতে পারত। কিন্তু তা না করে রাজউকের এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে এস্টেট শাখার সংশ্লিষ্ট উপ-পরিচালক, পরিচালক এবং সদস্য মোটা অঙ্কের উৎকোচ পেয়ে এ কাজটি করেছে।