মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচরে জাল জালিয়াতির অভিযোগে কাদিরপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৪ জুন বিজ্ঞ আদালতের আদেশনামাটি এজাহার হিসাবে গণ্য করে শিবচর থানায় মামলা রুজু করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন- কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান মাজেদ বেপারী, মোঃ নুরুল আমিন বেপারী, মাকসুদা আক্তার শিল্পী, হাসিবুল হাসান নয়ন, নুরুন্নাহার বেগম । মামলাটির বাদী হলেন নুর ইসলাম বেপারী ।মামলার এজাহার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক বেপারী গত ২১ জানুয়ারী ২০১২ইং তারিখে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে । মৃত্যুবরণের পর তার ওয়ারিশ থাকে তার ভাই নুর ইসলাম বেপারী, মোঃ নুরুল আমিন বেপারী, বোন সালেহা, রুকি, আলো, মুক্তি নামে চার বোন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা আক্তার। প্রথম স্ত্রী নুরুন্নাহারের ঘরে কোন সন্তানাদি না হওয়ায় বিগত ২৯ মাচ ২০১৯ তারিখে উভয়ের মধ্যে তালাক হয় । পরে নুরুল হক বেপারী বিগত ১০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে সালমা আক্তার নামে দ্বিতীয় বিবাহ করে। কিন্তু সেই ঘরে কোন সন্তানাদি হয় না। নুরুল আমিন বেপারী ও তাহার স্ত্রী মাকসুদা আক্তার শিল্পী তাহাদের গর্ভজাত সন্তান হাসিবুল হাসান নয়নকে মৃত নুরুল হক বেপারী ও তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নুরুন্নাহারের সন্তান দেখাইয়া সম্পত্তি আত্নসাৎ করার জন্য বিগত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং তারিখে কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের প্যাডে জাল- জালিয়াতিপূর্ণ ওয়ারিশ সনদ তৈরী করে। যা দিয়ে কাদিরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে হাসিবুল হাসান নয়নের নামে মিউটেশন করে ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেনের সাথে বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাল জালিয়াতির অভিযোগে কাদিরপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার কাগজপত্র আমি হাতে পেয়েছি । আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, আদেল উদ্দিন বেপারীর তিন ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। এর মধ্যে মেজো ছেলে নুরুল হক বেপারী মৃত্যু হয়। নুরুল হক বেপারীর কোন সন্তান না থাকায় তার সম্পত্তির ওয়ারিশ থাকে তারই ভাই-বোনেরা। কিন্তু নুরুল আমিন বেপারী তার পুত্র হাসিবুল হাসান নয়নকে মৃত্যু নুরুল হক বেপারীর ছেলে সাজিয়ে মিউটেশন করে। এই নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে ।
এ ব্যাপারে মৃত্যু নুরুল হক বেপারীর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ার কারণে তাকে তালাক দিয়ে আমাকে বিবাহ করে। ভাগ্যের কি পরিহাস আমারও কোনো সন্তান হয়নি। আমার স্বামী নুরুল হক বেপারী মারা যাওয়ার পর আমার ছোট দেবর তার ছেলেকে নুরুল হক বেপারীর ছেলে সাজিয়ে তার নামে মিউটেশন করে। প্রশাসনের কাছে এই মিউটেশন অবিলম্বে বাতিল করা জন্য অনুরোধ করছি। এ ব্যাপারে মৃত্যু নুরুল হক বেপারীর বোন আলো বেগম বলেন, মেজো ভাই মারা যাওয়ার পর তার ঘরে কোনো সন্তান না থাকায় আমারা ভাই-বোনেরা এমনিতে ওয়ারিশ হয়ে যেতাম । আমি এখনো বুঝতে পারছি না আমার ছোট ভাই নুরুল আমিন বেপারী কেন তার সন্তানকে মেজো ভাইয়ের ছেলে সাজিয়ে মিউটেশন করলো।
এ ব্যাপারে কাদিরপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আব্দুল হালিম তালুকদার বলেন, ৮নং ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন আমি মেম্বার ছিলাম । সেই সুবাদে ছৈজদ্দিন বেপারীকান্দি এলাকায় প্রতিটি পরিবারকে আমি ভালোভাবে চিনি ও জানি । বিশেষ করে আদেল উদ্দিন বেপারীর মেজো ছেলে নুরুল হক বেপারী সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল । নুরুল হকের প্রথম স্ত্রী নুরুন নাহার বেগমের কোনো সন্তান না হওয়ার কারণে নুরুল হক বেপারী তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সালমা বেগমকে বিবাহ করে । কিন্তু সেই ঘরেও কোনো সন্তান হয়নি। নুরুল হক বেপারীর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই নুরুল আমিন বেপারী তার ছেলে হাসিবুল হাসান নয়নকে নুরুল হক বেপারীর ছেলে সাজিয়ে মিউটেশন করে । এই নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগে আছে ।
এ ব্যাপারে কাদিরপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মনির উজ্জামান সরদার বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও ওয়ারিশের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে হাসিবুল হাসান নয়নের নামে মিউটেশন করে দিয়েছি । চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা যদি তথ্য গোপন করে সার্টিফিকেট দেয় এর দায় দায়িত্ব আমার না। এবার হাসিবুল হাসান নয়নের নামে খাজনা দিতে এসেছিল আমি খাজনা নেই নাই। আমি তাদের বলেছি আপনারা তথ্য গোপন করে মিউটেশন করেছেন তাই আপনাদের খাজনা নেওয়া যাবে না।