: নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে চক্রান্তকারীদের তৎপরতা অনেক বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার (০৩ আগস্ট) গণভবনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।১৫ আগস্ট বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারানো এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করলো আর সেই পরিবার থেকে আমি বেঁচে এসে, সরকারে আসলাম। সাফল্য এনে দিলাম। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম। এটা তো অনেকে পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি এখন তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তবে যারাই তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের কার কী, সে খবরও আমি রাখি। আমার তো অচেনা কেউ নাই। তো তাদেরও বিষয় আমার জানা আছে। কিন্তু তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। ’‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে করেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে করেছে। এখন ইলেকশন যতই সামনে আসছে আবার; মানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তাদের কী লাভ হবে জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি, করেও না। ’অতীতে সামরিক শাসকদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা যারা দখল করে, তারা তো ক্ষমতার চেয়ারটা কীভাবে দখল করে রাখবে ওই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। আমাদের কাছে এটা কোনো বড় বিষয় নয়। ’তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাটা আমার কাছে হচ্ছে জনগণের সেবা করার একটা সুযোগ। তো ক্ষমতা থাকলে আছে না থাকলে নাই। কিন্তু হ্যাঁ থাকলে যেটা সুবিধা হয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই। সেই সুযোগটা যথাযথভাবে কাজে লাগাই। যাক আমি সেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি; যে কারণে আপনি লক্ষ্য করেছেন আমরা কিন্তু একেবারে তৃণমূল মানুষ তাদের উন্নতি, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন, তাদের জন্য কাজ ওইভাবে কিন্তু আমরা যাত্রা শুরু করেছি। ’বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এই গ্রামের মানুষগুলো, সাধারণ মানুষগুলো, গরিব মানুষগুলো তাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, কত অত্যাচার সহ্য করেছেন। জেল-জুলুম খেটেছেন। তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তিনি শুধু এই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। ’সবাইকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে। একে তো করোনা, তারপরে হলো ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ। তারপরে স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। এই স্যাংশনের ফলেই সব জিনিসের দাম বাড়ছে। ’ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি না কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে অস্ত্র যারা প্রডিউস (উৎপাদন) করে, অস্ত্র যারা প্রডাকশন করে তারাই লাভবান হচ্ছে। আর মরছে সাধারণ মানুষ, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে আজকে কী মানবেতর জীবন! সেটিই সব থেকে দুঃখজনক। মানুষের তৈরি দুযোর্গ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিপর্যয়ের ধাক্কাটাও যেমন আসবে। ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত্ব আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনাসহ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে আধুনিকীকরণের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন।গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুর রহমান, ট্রেজারার এম এ সালাম, মহাসচিব কাজী সফিকুল আজম, অ্যারমা দত্ত, এম মঞ্জুরুল ইসলামসহ অন্যান্য বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।