কিন্তু এবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ইতি ধর। তার কঠোর পদক্ষেপে একের পর এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে কালোবাজারিরা।এর পেছনে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ও তার টিম। তিনি নিজেই প্রতিদিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে টিকিটের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেন। কোনও অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর, সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী, স্টেশন মাস্টার জাফর আলম, টিআই, জেটিআইসহ একটি টিম নিয়মিত টিকিট ব্যবস্থাপনা তদারকি করছেন।
জানা গেছে, আগে রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের নামে ৫-১০টি টিকিট নিতেন। পরে সেগুলো কালোবাজারিদের দিয়ে দিতেন। তারা সেগুলো অধিক দামে বিক্রি করতেন। বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েই তিনি এসব অনিয়ম বন্ধ করেন। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অন্যায় আবদার নিয়ে আসলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
কোরবানের ঈদে অতিরিক্ত বগি, স্পেশাল ট্রেন, যাত্রীসেবায় কঠোর মনিটরিং এবং টিকিট কালোবাজারি রোধে মাঠে রয়েছেন তিনি। এছাড়াও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে কঠোর নজরদারিতে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ট্রেনে যাত্রীসেবায় অসুবিধা দূর করা এবং ট্রেন ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থানে পাথর ছুঁড়ে মারার বিষয়ে সতর্ক থাকা, টিকিট কালোবাজারি রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।
রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি যাত্রীসেবায় অসহযোগিতা এবং টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক শাস্তি ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর।
তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া আছে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করাসহ নানা বিষয়ে ২৪ ঘণ্টাই নজরদারিতে আছি। ঈদ উপলক্ষে এই নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন কোনও হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকার কারণে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনসহ নানা উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে স্টেশনগুলোকে কেন্দ্র করে কালোবাজারিরা সক্রিয় থাকে। ঈদের সময় এ চক্র আরও তৎপর হয়। এজন্য চলতি বছর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিকিট সংগ্রহের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করেছেন।
অভিযোগ আছে, টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে খোদ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ রেলের অনলাইন সার্ভার সহজের (সাবেক সিএনএস) চিহ্নিত কর্মচারী এবং রেলওয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। তারাই কৌশলে টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেয়।
গত ২ জুলাই রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এলাকা থেকে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রির সময় আব্দুর রহিম নামের কালোবাজারিকে আটক করে। এর পরের দিনই ৩ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন ট্রেনের ৯টি টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সময় চট্টগ্রাম স্টেশনস্থ জিআরপি থানার পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ অফিসের রাস্তার ওপর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ২ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। তারা উচ্চমূল্যে ১জন যাত্রীর কাছে টিকিট বিক্রির সময় গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর জেনারেল শাখায় কর্মরত হাবিলদার মো. রবিউল হোসেন (৩৯) ও সিপাহী মো. ইমরান হোসেন (২৭)। এসময় তাদের তল্লাশি করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন ট্রেনের মোট ৯টি টিকিট এবং টিকিট বিক্রির মোট ১০ হাজার ৩২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ট্রেনের টিকিট উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনে চাপ বাড়ে। শান্তি আর নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। এ সুযোগ কাজে লাগায় কিছু অসাধু ব্যক্তি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।