আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিয়েভ সফরে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে ‘ব্যতিক্রমী’ আচরণ পেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অপমান না করার আহ্বান জানিয়ে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের চরম সমালোচনার মুখে ছিলেন তিনি।দুই নেতার আলিঙ্গনের মুহুর্তে যেন এরই প্রতিফলন ঘটল!ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাক্রোঁ তাঁর ট্রেডমার্ক গাঢ় স্যুটে অনবদ্য পোশাকে জেলেনস্কির হাত আঁকড়ে ধরে হাসিমুখে ক্যামেরার দিকে পোজ দিচ্ছিলেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ফরাসি নেতা ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তাল না মিলিয়ে মেঝের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তার চোখেমুখেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে অসন্তুষ্টি।আরেক ছবিতে দেখা যায়, জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করছেন ম্যাক্রোঁ। এ সময় জেলেনস্কির হাত শক্ত করে ধরেও আছেন তিনি। তবে জেলেনস্কি মন খারাপ এবং একইসঙ্গে দৃঢ় ভঙ্গিমায় রয়েছেন। ম্যাক্রোঁকে সেভাবে আলিঙ্গন না করে বুক বরাবর হাত ধরে রেখেছিলেন জেলেনস্কি।ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি গত বৃহস্পতিবার একসঙ্গে একটি ট্রেনে চড়ে কিয়েভে পৌঁছান। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস লোহানিসও একইদিন সেখানে পৌঁছেন, তবে আলাদাভাবে।ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছেন। ইউক্রেনে হামলার কারণে পুতিন বর্তমানে সারা বিশ্ব থেকে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’।তবে পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে ‘ঐতিহাসিক এবং মৌলিক’ ভুল করলেও রাশিয়াকে অপমান করা উচিত নয়।সে কারণে কিয়েভ সফরে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার ওপর মন খারাপ করে থাকলেন নাকি খুশি হলেন, এ নিয়ে ম্যাক্রোঁর অবাক হওয়ার কিছু নেই।চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন যেন রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে, সে জন্য সাহায্যের অঙ্গীকার করেছেন কিয়েভ সফররত চার ইউরোপীয় নেতা। ইউক্রেন পুনর্গঠনের অঙ্গীকারও করেছেন তাঁরা।গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হওয়ার পর ইউরোপের ওই চার ইউরোপীয় নেতার এটাই প্রথম কিয়েভ সফর। সফরকালে তাঁরা রুশ হামলায় বিধ্বস্ত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা বৈঠকে বসেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে আধুনিক অস্ত্রের জন্য আবারও মিত্র দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেওয়ার জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক তার দেশের সামরিক প্রয়োজন সম্পর্কে বলেন, ইউক্রেনের এক হাজার হাউইত্জার, ৫০০ ট্যাংক এবং এক হাজার ড্রোন প্রয়োজন। রুশ হামলায় বিধ্বস্ত স্থান পরিদর্শনের সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধান ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফ্রান্স প্রথম দিন থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে আছে। আমরা কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই ইউক্রেনের সঙ্গে আছি। ইউক্রেনকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে এবং জিততে হবে। ’রাশিয়ার হামলার ‘বর্বরতার’ নিন্দা করেছেন ম্যাক্রোঁ। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের ইরপিনের বাসিন্দাদের এবং ওই অঞ্চলের অন্যদের সাহসের প্রশংসা করেছেন তিনি, যারা রাজধানী কিয়েভ দখল করার রুশ প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে সাহায্য করেছিল।যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তার ব্যাপারে ইউরোপ তৎপর নয়, কিয়েভের এমন অভিযোগের মধ্যে চার ইউরোপীয় নেতা কিয়েভ সফরে গেলেন। কিয়েভের অভিযোগ, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি ইউক্রেনকে সহায়তা করার ব্যাপারে কালক্ষেপণ করছে। ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার চেয়ে এসব দেশ নিজেদের সমৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং অস্ত্র সরবরাহে দেরি করছে।