ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সমাপনীর বদলে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
করোনার কারণে আগামী নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়।
তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সার্বিক পরস্থিতি বিবেচনা করে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অতএব, আমরা পিইসি পরীক্ষাটা নিচ্ছি না, এ বছর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নেব।
এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এই পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে না বলে জানান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে আসছে সরকার, অন্য বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষায় বসতে হয় খুদে শিক্ষার্থীদের।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এবার পঞ্চমের দুই সমাপনী পরীক্ষার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
এমসিকিউ পদ্ধতিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না- প্রশ্নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, আমরা তাদের দায়িত্ব দেব। শিক্ষকরা যেভাবে প্রশ্ন করবেন, সেভাবেই হবে, স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) তিনটি বিকল্প পাঠ পরিকল্পনা করতে বলেছিলাম। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসের জন্য তিনটি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। যেহেতু সেপ্টেম্বরে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি, তাই সেপ্টেম্বরকে বিকল্প হিসেবে ধরছি না। অক্টোবর এবং নভেম্বরকে সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা করেছি, সেটাকে সামনে রেখে, সেটার ভিত্তিতে প্রত্যেকটা স্কুল ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে সংসদ টিভি এবং বেতারে ক্লাস পরিচালনা ছাড়াও অনলাইনে পাঠদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) এবং অন্যান্য পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয় জোরালো চিন্তা-ভাবনা করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো সময় এখনও আসেনি বলে সোমবার (২৪ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে স্কুল রি-ওপেনিং হবে সেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমরা এটা জারি করব। স্কুল রি-ওপেনিং হলে কী কী করতে হবে, সেটা ওই নীতিমালার মধ্যে বলা আছে। প্রত্যেকটা স্কুলকে বলেছি, নিজেদের মতো করে রি-ওপেনিং প্ল্যান করতে। কারণ একেক স্কুলের ছাত্র সংখ্যা একেক রকম। এসব বিবেচনায় নিয়ে তারা পরিকল্পনা করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব কবে স্কুল খুলতে পারব।
আগামী নভেম্বরে প্রাথমিক সমাপনীর পর অষ্টমের সমাপনী জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। আবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়ে আসছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। তবে অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জেএসসি-জেডিসিতে প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন।