বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, প্রজ্ঞাপনে ভাড়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু একই জনবল এবং বাস দিয়ে ৫০ ভাগ যাত্রী বহন করব, বাড়তি ভাড়া নিতে পারব না, এতে আমাদের লস হবে। মালিকরা তো ভর্তুকি দিয়ে গাড়ি চালাবেন না।
তিনি বলেন, অফিস-আদালত, কল-কারখানা সব শতভাগ চালু রেখে কীভাবে বাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালু রাখতে বলে। এতে হয়তো দূরপাল্লায় যাত্রীদের সমস্যা হবে না, কিন্তু নগর পরিবহনে অফিস সময়ে তো যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন না। তখন মালিকদের দোষ দেবেন।
ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করবেন কিনা—প্রশ্নে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, গতবার বিধিনিষেধের সময় ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া ছিল, যেহেতু কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বেড়েছে। তাই ওখান (৬০ শতাংশ) থেকে কিছু কমাক। লাভ আমরা নাই করলাম।
ভাড়া এবং চালকদের সনদের বিষয়ে সড়ক সচিবের সঙ্গে কথা বলছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারাও কিছু জানে না।
চলাচলের সময় চালক ও সহকারীদের টিকার সনদ প্রদর্শনের বিষয়ে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, সরকারি হিসেবে ৩৫ শতাংশ টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৬৫ শতাংশই দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে এটা সম্ভব? বাস টার্মিনালে স্পট রেজিস্ট্রেশন করে টিকার ব্যবস্থা করুক।সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। কিন্তু যেখানে ঠেকে যাবো সেখানে তো সমাধান লাগবে।দুই মাস আগে বাস-লঞ্চের ভাড়া বেড়েছে
গত ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে বাস-ট্রাক-লঞ্চ মালিকরা ধর্মঘট করে ভাড়া বৃদ্ধি করে নেয়। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সার স্থলে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা ও ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা করা হয়।
ঢাকা টান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। এই ভাড়া বৃদ্ধি গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আর লঞ্চের ক্ষেত্রে প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি যাত্রী ভাড়া ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করে ২ টাকা ৩০ পয়সা এবং প্রথম ১০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি যাত্রী ভাড়া ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বাস ও লঞ্চের পুনঃনির্ধারিত এই ভাড়া ৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
কাগুজে সিদ্ধান্ত হবে
স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু খোলা রেখে কেবলমাত্র গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রীবহনের সিদ্ধান্তটি কাগুজে সিদ্ধান্তে পরিণত হবে বলে জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, অর্ধেক আসনে যাত্রীবহন করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশসহ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধি না করার দাবি জানায় সংগঠনটি।
লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দরাদরি
অন্যদিকে, লঞ্চ কীভাবে চলবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং লঞ্চ মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তারা দরাদরি করছেন। এ বিষয়ে এক-দু’দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।
ভাড়া না বাড়িয়ে শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন
আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হবে না।
ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনে বুধবার (১২ জানুয়ারি) থেকে ২৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং ২৫ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।