দুদকের পক্ষে আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এই মামলায় এমদাদুল ইসলাম ভূঞার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিরুদ্ধে ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/ এবং তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ জুন দুটি পৃথক চালানে মোট পাঁচ কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল দলিল তৈরি করে আত্মসাৎ করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঢাকা জিপিওর পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আনিসুর রহমান আসামি এমদাদুল হক ভূঞার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা জিপিও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডাক অধিদপ্তর সংলগ্ন হওয়াতে ঢাকায় অবস্থিত ডাক অধিদপ্তরের অধীনস্ত সব দপ্তরের মঞ্জুরিকৃত বিল ঢাকা জিপিও থেকে পরিশোধ করা হয়ে থাকে। বিলের ওপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরিপত্রে প্রদর্শিত সরকার নির্ধারিত ভ্যাট ও আইটি ঢাকা জিপিওর ট্রেজারি কর্তৃক কর্তন সাপেক্ষে কর্তনকৃত ভ্যাট/আইটি ট্রেজারি ফরমের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, বায়তুল মোকাররম শাখায় জমা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা জিপিওর প্রধান কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করা হয়ে থাকে।
২০১৯ সালের ৫ মে ঢাকা জিপিওর তদানীন্তন প্রধান কোষাধ্যক্ষ এমদাদুল ইসলাম ভুঞাকে ‘মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প’ থেকে একই বছরের ২৮ এপ্রিল মঞ্জুরিকৃত একাধিক বিল থেকে ভ্যাট ও আইটি বাবদ কর্তনকৃত ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ৫ মে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ধাপে ধাপে ওই টাকা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বায়তুল মোকাররম শাখার মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করেন।
সম্প্রতি ওই প্রকল্পের নিরীক্ষা কার্যক্রমের চালানগুলোর অনলাইন ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে দেখা যায় এমদাদুল ইসলাম ভুঞার চালানকৃত চালান নং-১২৯৬ এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৭ জুন জমাকৃত চার কোটি ৪২ লাখ ৫৪ হাজার এবং একই তারিখে চালান নং ১২৯৭ এর মাধ্যমে জমাকৃত এক কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, যার সর্বসাকুল্য পরিমাণ পাঁচ কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদর্শন করছে না।
সোনালী ব্যাংক বায়তুল মোকাররম শাখায় সরাসরি যোগাযোগ করে জানা যায়, বর্ণিত চালান দুটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। উল্লিখিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় এমদাদুল ইসলাম ভুঞার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় আলোচ্য অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে এমদাদুল ইসলাম ভুঞাকে ঢাকা জিপিও কর্তৃপক্ষ আটক করে পল্টন মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
অভিযোগে উল্লিখিত অপরাধ দুর্নীতি কমিশনের তফসিলভুক্ত হওয়ায় পল্টন থানা পুলিশ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে না নিয়ে জিডি মূলে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই কার্যালয়ে পাঠায়। এছাড়া এমদাদুল ইসলাম ভুঞাকে জিডি মূলে আদালতে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে এই আসামি জামিনে মুক্তি পান। এ অবস্থায় গত বছর ২৪ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) মো. তালেবুর রহমান এ বিষয়ে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেন। এরপর গত বছর ২৬ আগস্ট এই মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন এমদাদুল ইসলাম ভুঞা। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।