নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর বেলাবতে যাত্রীবাহী বাস থেকে ফেলে দিয়ে পরে তার চাপায় স্কুলশিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করেছে তার সহপাঠীরা। নিহত শিক্ষার্থীর নাম আতিকুল ইসলাম (১৫)। সে রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে এবং উত্তর বাখরনগর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত শুক্রবার দিন বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের মহাসড়ক অবরোধকালে এলাকাবাসীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ও পদচারী–সেতুর দাবি তোলে। এ ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ির চালক ও তাঁদের সহকারীদের শিক্ষার্থীসহ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বন্ধের দাবি করা হয়। অন্যদিকে নিহত আতিকুলের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর দাবি জানানো হয়।বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টার এই বিক্ষোভ চলাকালে মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন ও ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হোসেন ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।এর আগে গত বুধবার রাত নয়টার দিকে বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় আতিকুল মারা যায়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, মাত্র পাঁচ টাকার জন্য কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে যাত্রীবাহী ওই বাস থেকে আতিকুলকে লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তারপর হঠাৎই ওই বাস চলতে শুরু করলে তার চাকায় পিষ্ট হয়ে আতিকুল মারা যায়। এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।নিহত কিশোরের স্বজন ও সহপাঠীরা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ‘যাতায়াত’ পরিবহনের ওই যাত্রীবাহী বাস কিশোরগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। নরসিংদীর ভেলানগর থেকে বারৈচার উদ্দেশে আসা আতিকুলের দুই বন্ধু ওই বাসে ছিল। তাদের এগিয়ে নিতে এসেছিল আতিকুল। বাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছার আগমুহূর্তে ওই দুই বন্ধুর সঙ্গে বাসচালক ও কন্ডাক্টরের ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। বাসটি বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে থামার পর এ নিয়ে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে আতিকুল সেখানে যায়। আতিকুলও এই কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আতিকুলকে লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ওই সময় বাসচালক হঠাৎ বাসটি চালানো শুরু করলে আতিকুল ওই বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে তার মাথা ওই বাসের চাকার নিচে চলে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।পরে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওই বাসের চালককে আটক করেন। খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত কিশোরের লাশ উদ্ধার ও ওই বাসচালককে আটক করে। আজ সকালে নিহত কিশোর আতিকুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।ঘটনাস্থলে থাকা ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত কিশোরের পরিবারের সদস্যরা বেলাব থানায় মামলা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’বেলাব ইউএনও মো. আক্তার হোসেন বলেন, বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী নিহত কিশোরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই মহাসড়কটি সম্প্রসারিত করার কাজ শুরু হবে। ওই সময় যাতে বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে একটি পদচারী–সেতু নির্মাণ করা হয়, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।