ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তরের ‘নির্দেশনা’ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরেকটি ‘নির্দেশনা’ দিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, রাষ্ট্রীয় অপচয়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে নির্বাচন বিঘ্নিত হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে এনআইডি কার্যক্রম হস্তান্তরের বিপক্ষে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
তবে ইসির কোনো যুক্তিতে সাড়া না দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১১ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আলমের স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাটি নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে দানা বাড়ছে ক্ষোভ। কোনো রকম আলোচনা না করেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়াকে তারা ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ গঠন/পুনর্গঠন, নাম পরিবর্তন এবং কার্যাতালিকা সংশোধন’ সংক্রান্ত জারি করা মন্ত্রপরিষদ বিভাগের পরিপত্রের লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. সাইদুর রহমানের ২০১৮ সালের ২ আগস্ট স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যতালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে এনআইডি কার্যক্রম সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করার বিষয়ে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি।
এনআইডি কীভাবে কাজ করে, এতে লোকবল কত, কোন প্রক্রিয়ায় এনআইডি সার্ভার পরিচালিত হয়, এ কার্যক্রম অন্য কারো হাতে গেলে তার ঝুঁকি, সুবিধা-অসুবিধা কোনো বিষয় নিয়েই ইসির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি।
গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এনআইডি সরিয়ে নেওয়ার মতামত দেওয়া হলে ২৪ মে ইসিকে এনআইডি ছেড়ে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিতে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর নির্বাচন কমিশন যুক্তি তুলে ধরে এনআইডি নিজেদের কাছে রাখার পক্ষে মতামত তুলে ধরে চিঠি দেয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২০ জুন ইসিকে একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, সরকার এনআইডি কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, এনআইডি অনুবিভাগ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। কীভাবে নেবে, না নেবে এ বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা তো টেবিল চেয়ার না যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম। এনআইডি সেবা চলে গেলে আমাদের কার্যক্রমে অসুবিধা হবে।
তিনি বলেন, তারা নিতে চায়, আমরা দেবো না, এ রকমও বলা যায় না। সেই রকম অবস্থানে আমরা নেই। আমাদের বসতে হবে তাদের সঙ্গে, এটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কথা। …সরকার কী যুক্তিতে চায়, তাদের অবশ্যই কিছু যুক্তি আছে। আমাদেরও কিছু যুক্তি আছে, এগুলো নিয়ে ডায়লগ হবে। সিইসির সেই বক্তব্যের পর ডায়লাগের কোনো উদ্যোগ কোনো পক্ষ থেকেই নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উপরন্তু কার্যক্রম ছেড়ে দেওয়ার অগ্রগতি জরুরি ভিত্তিতে জানানোর জন্য এলো নতুন নির্দেশনা।