এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হলো হাসান আজিজুল হককে

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হলো হাসান আজিজুল হককে
রাজশাহী প্রতিনিধি : উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ। তাকে শনিবার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের অধীনে তিনি চিকিৎসা নেবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু।প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ‘ভীষণ অসুস্থ’। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় রাজশাহী মহানগরের আবাসিক এলাকা বিহাসে থাকা হাসান আজিজুল হকের বাড়ি ‘উজান’ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে রাজশাহী বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স তার বাবার প্রধান সমস্যা। এছাড়া হার্টের সমস্যা আছে। পড়ে গিয়ে তিনি কোমরেও আঘাত পেয়েছিলেন। সঙ্গে আছে ডায়াবেটিস। এখন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ। বাসায় অন্তত সাতজন চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।এদিকে, ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আব্বাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। বাকি দুনিয়ার কাছে যে রূপেই তিনি পরিচিত হোন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার জন্য নিরন্তর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন আমার বাবা। মোটের উপর গল্পকার হিসেবেই সবাই চেনেন হাসান আজিজুল হককে। ২০০৬-এ তার বহুপ্রার্থিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ শেষ করে আত্মজীবনীতে হাত দিলেন। ধরে নিয়েছিলাম, আব্বার হাতে আর নতুন কোনো তাস নেই! কিন্তু আশি পেরনোর পরেও কলম থেকে নতুন নতুন কাজ বের করে আমায় অবাক করেছেন।লিখেছেন অনুবাদগ্রন্থ (আর্নেস্টহেমিংওয়ে: কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প), ভ্রমণবৃত্তান্ত (লন্ডনের ডায়েরি) আর কবিতার বই (সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে)। ‘বাপ, তোর সোনার কলম হোক’ -মায়ের দোয়া ফলেছে তার জীবনে। মানুষের দোয়াও পেয়েছেন নিশ্চয়। ’তিনি লেখেন, ‘মাঝে মাঝে সে প্রমাণ পাই যখন ভাড়া মেটানোর সময় বৃদ্ধ অটোচালক হঠাৎ তার কুশল জানতে চেয়ে চমকে দেন অথবা শহরের রাস্তায় অচেনা কেউ এগিয়ে এসে তার কথা জানতে চান। আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাকে আরো একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারী। ছেলেবেলা থেকে দেখে আব্বার ভাত-তরকারির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কোভিডের মরণকামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন। ’তিনি আরও লেখেন, ‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন। ’কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বয়স এখন ৮২। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসন এলাকা ‘বিহাস’- এ নিজের বাসায় থাকছেন। অসুস্থ হলেও তিনি এতদিন বাসাতেই ছিলেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে