সরকারি প্রণোদনার আশায় করোনা পরীক্ষার ধুম

সরকারি প্রণোদনার আশায় করোনা পরীক্ষার ধুম

সরকারি প্রণোদনা লাভের আশায় রাজশাহীতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের করোনা পরীক্ষার হার। উপসর্গ ছাড়া করোনা পরীক্ষায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ না থাকলেও, চিকিৎসক-নার্স, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সরকারি চাকরিজীবীদের করোনা পরীক্ষার হিড়িক পড়ে গেছে।

কেউ কেউ একাধিকবার পরীক্ষা করছেন। প্রণোদনার আশায় এই কর্মচারীরা গণহারে নমুনা পরীক্ষা করায় একদিকে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছে, অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে সরকারের অর্থ।

গত ৭ এপ্রিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য করোনাকালীন প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। এতে গ্রেড ভেদে আক্রান্ত ও মারা গেলে পাঁচ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের পরিবার। করোনায় ক্ষতিপূরণ দিতে সব মিলিয়ে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৫শ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি করোনা মোকাবিলায় যুক্ত ডাক্তার-নার্সদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাকি ৩৫০ কোটি টাকা এ খাতে ব্যয় করা হবে। গত ৯ জুলাই সেই প্রণোদনা দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থ বিভাগ।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসাপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে দু’টি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যন্ত্রের ত্রুটির কারণে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রামেক হাসপাতাল ল্যাবে সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল পরীক্ষা। তবে স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও দুই ল্যাবে করোনা শনাক্তে পরীক্ষা চলছে। একটি ল্যাবে দুই শিফটে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। উপসর্গ ছাড়া নিছক সন্দেহ বা আতঙ্কের বশে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত কয়েকদিনের করোনা পরীক্ষার তালিকায় চিকিৎসকদের নাম এসেছে বেশি। তবে পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও ছোট নয়।

গত সোমবার (১০ আগস্ট) রামেক ল্যাবে ১৮৫ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের ১০ কর্মচারীসহ রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারী ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মচারী মিলে রয়েছেন অন্তত ১০০ জন। আর বাকি ৮৫ জন রয়েছেন সাধারণ মানুষ। নমুনা পরীক্ষা হওয়া এই ১৮৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনের করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়।

আগের দিন রোববার (৯ আগস্ট) একই ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭৯ জনের। যার মধ্যে ৪০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই ১৭৯ জনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই সরকারি চাকরিজীবী। যাদের মধ্যে অন্তত ৯০ শতাংশই সুস্থ এবং শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ নেই।

ল্যাবে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, মাঝে ১০০ জনের করোনা নমুনা পরীক্ষা হলে অন্তত ৬০ জনের পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছিল। কিন্তু প্রণোদনার আশায় অতিরিক্ত হারে নমুনা পরীক্ষা শুরু করার পর থেকেই এখন ১০০ জনে ৩০ জনের শরীরেও করোনা ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে না। সুস্থ মানুষ এখন করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। ফলে নমুনায় এখন পজিটিভ কম আসছে।

সবশেষ ১৯ আগস্ট রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ১২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় মাত্র ৩৮ জনের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ১৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৫৯ জন। নমুনা পরীক্ষার একটি বড় অংশেই রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

গণহারে নমুনা পরীক্ষার কারণে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। ভোগান্তির আশঙ্কায় অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না।

এদিকে, অহেতুক পরীক্ষার কারণে সরকারের অর্থ অপচয় হওয়ায় এর লাগাম টেনে ধরা দরকার বলে মনে করছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য। তিনি বলেন, এভাবে করোনা পরীক্ষা করা উচিত নয়। সুযোগ আছে, তাই তারা পরীক্ষা করাচ্ছে। অহেতুক পরীক্ষা করা লিমিটেড করা দরকার। কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন