লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লোকে লোকারণ্য লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী ফেরীঘাটে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ‘লকডাউনেও’ ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর ঘটে প্রায় ৮ শতাধিক যাত্রী নিয়ে এসেছে ফেরি কৃষাণি।এতে একটি গাড়িও দেখা যায়নি। শুধু এই একটি ফেরি নয় এ রুটের তিনটি ফেরিতেই ছিল একই অবস্থা।শনিবার (৩১ জুলাই) এ রুটে যাতায়াত করা তিনটি ফেরিতেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে যতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।বিকেলে মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বলেন, ভোলা থেকে সিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে আসা প্রত্যেকটি ফেরিতেই যাত্রীদের ভিড় ছিল। একটি ফেরিতেও গাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। তবে সবাই কারখানার শ্রমিক। শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। এছাড়া ঈদ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যাত্রীদের এমন চাপ হয়নি।স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফেরি কৃষাণি এসে মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে পৌঁছায়। এসময় ফেরিতে নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। পুরো ফেরি যাত্রীর ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এদিকে ঈদ থেকে শনিবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত দেশের সকল শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল। লম্বা ছুটি নিয়ে শ্রমজীবী মানুষগুলো বাড়িতে চলে আসে। হঠাৎ করে রোববার (১ আগস্ট) থেকে কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়। চাকরি বাঁচাতে ‘লকডাউনের’ কথা ভুলে গিয়ে শ্রমজীবীরা ভোলা থেকে মেঘনা পাড়ি দিতে ফেরিতে উঠলেও ইজারাদার নিজ ইচ্ছে মতো ভাড়া হাকিয়ে নিচ্ছেন। ৭০ টাকা ভাড়া হলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে। মজুচৌধুরীরহাট ঘাটে পৌঁছে অতিরিক্ত অটোরিকশা ভাড়া নিয়েও দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।জানা গেছে, মজুচৌধুরীরহাট থেকে লক্ষ্মীপুর উত্তর স্টেশন আসতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫০ টাকা স্বাভাবিক ভাড়া। তবে শনিবার সকাল থেকে এ রুটের অটোরিকশা চালকরা নিজ ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছেন। ১০০-১৫০ টাকা প্রতি যাত্রী থেকে আদায় করা হচ্ছে। কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের লক্ষ্মীপুর পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।কয়েকজন যাত্রী জানায়, কারখানা খুলে দিয়েছে। যেভাবেই হোক কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে। ভাড়া বেশি দিয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত এসেছেন। যত ভাড়াই লাগুক, যে বাহনই হোক ঢাকায় পৌঁছাতে হবে তাদের।লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীরহাট মহাসড়কের সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. সজিব জানান, রাস্তার অবস্থা ভালো না। ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে আধাঘণ্টার ওপর সময় লাগে। এ মুহুর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।সকাল থেকেই ভোলা-বরিশাল ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে ফেরি পারাপারের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না যাত্রীরা।ণপরিবহন বন্ধ থাকায় পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে লঞ্চ, ফেরি, নৌকায় করে এসব ঘাটে এসে জড়ো হচ্ছেন যাত্রীরা। পরে এসব অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় করে ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করছেন তারা।ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী যাত্রীরা জানিয়েছেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। একইসঙ্গে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিল্প-কারখানা।এর মধ্যে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান।এরপরই শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা আরোপিত বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত রাখা হলো।