জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জয়পুরহাট শহরের পারুলিয়া গ্রামে যৌতুক না পেয়ে এক পাষণ্ড স্বামী তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী গৃহবধূ রুমি আক্তার এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।আদিম বর্বরতাকে হার মানানো পাশবিক এ নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা। আর পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকায় এখনো গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। জানা যায়, ১১ মাস আগে জয়পুরহাট শহরের পারুলিয়া গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রাসেল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় পাঁচবিবি উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের মেয়ে রুমি আক্তারের। বিয়ের সময় ৭০ হাজার টাকা ও ঘর সাজিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও দিনমজুর বাবা তা পরিশোধ করতে একটু সময় নেন। এরই জের ধরে প্রায় দিনই স্বামী রাসেল ও তার মা-বাবা রুমিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। সর্বশেষ ২৮ মে সন্ধ্যায় মাছ কাটাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী ও শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুমি শুয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে তার শরীরে স্বামী গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় বাহির থেকে দরজা লাগানো থাকায় তিনি বের হতে না পারলেও পরের দিন সকালে প্রতিবেশীদের মোবাইলে খবর পেয়ে রুমির মা-বাবা এসে তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে গরীব বাবা বেলাল হোসেনের যেটুকু অর্থ ছিল, তাই দিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে আবারো জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার রুমি আক্তার বলেন, শরীরে আগুন যখন জ্বলছিল, তখন আমার স্বামী ঘরেই বসে ছিলেন। কিন্তু তিনি এক ফোঁটা পানি দিয়েও আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি। রুমির বাবা বেলাল হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে আমার জামাইসহ তার মা-বাবা যেভাবে, অত্যাচার করেছে তার আমি বিচার চাই।এ বিষয়ে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী খোরশেদ আলম জানান, একজন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ওপড় যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা আদিম সভ্যতাকেও হার মানিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মিজানুর রহমান জানান, মেয়েটির গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের ৮০ শতাংশের উপরে পুড়ে গেছে। তার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর জাহান জানান, রাসেলকে আসামিকে করে নির্যাতনের শিকার রুমির বাবা বাদী হয়ে জয়পুরহাট থানায় একটি মামলা করেছেন। কিন্তু আসামি পলাতক থাকায় এখনো তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।২৮ মে রাতের এ ঘটনায় ৩ সপ্তাহ পার হলেও অভিযুক্ত রাসেলকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে সদর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।