নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্যের বাসায় কাজ করে স্ত্রীর জমানো টাকা অনৈতিক কাজে ব্যয় করতেন স্বামী। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো।একপর্যায়ে স্ত্রী জানতে পারেন তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন, একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেই তিনি থাকতে শুরু করেন।এ নিয়ে দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষোভ ও ধারাবাহিক দ্বন্দের জেরে স্বামী ময়না মিয়াকে খুনের পরিরিকল্পনা করেন প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। সে অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে ময়নাকে খুন করা হয়। এতেই ক্ষান্ত হননি ফাতেমা, মরদেহ গুম করতে ছয় টুকরো করে তিন স্থানে ফেলে দিয়ে আসেন।রোববার (৩০ জুন) রাতে রাজধানীর মহাখালী আমতলী এলাকা থেকে হাত-পা ও মাথা ছাড়া একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মহাখালী বাসটার্মিনাল এনা বাস কাউন্টারের সামনে থেকে হাত-পা উদ্ধার করা হয়।দ্রুততম সময়ে এ ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার (৩১ মে) দুপুরে কড়াইল বস্তিতে নিজ বাসা থেকে ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়।মঙ্গলবার (০১ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ।তিনি জানান, রোববার (৩০ মে) রাতে আমতলী এলাকায় একটা নীল রঙের ড্রাম থেকে হাত-পা ও মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই রাতে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে একটা ব্যাগ থেকে দুই পা এবং দুই হাত উদ্ধার করা হয়। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সহায়তায় মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়।এরপর প্রথমে নিহত ময়নার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার স্বামীর খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। এক পর্যায়ে জানা যায়, ভিকটিম কড়াইল এলাকাতে প্রথম স্ত্রীর ফাতিমার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে বসবাস করছিলেন। তদন্তের ধারাবাহিকতায় ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারের পর ফাতেমা খাতুন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২৩ মে থেকে তার স্বামী ময়না মিয়া তার বাসাতেই অবস্থান করেন। পারিবারিক কলহ, টাকা পয়সা বন্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে মৃত ভিকটিম মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার জমানো টাকা ময়না মিয়া নিয়ে অনৈতিক কাজে খরচ করতেন বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা।এক পর্যায়ে ফাতেমা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ময়না মিয়াকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে নিস্তেজ করে এবং পরবর্তীতে তাকে গলা কেটে করে হত্যা করে মরদেহ গুম করে ফেলে। ধরা না পড়তে সে মরদেহ ছয় খণ্ড করে তিন ভাগে ভাগ করে প্রথমে বডি আমতলীতে এবং হাত-পা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ফেলে দেন। পরে বাসায় এসে মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের নিচে গুলশান লেকে ফেলে দেয়। তাকে কেউ সন্দেহ করবেনা এবং তিনি গ্রেফতার হবেন না ভেবে বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে থাকেন ফাতেমা।ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ফাতেমা একাই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। আমরা খুব দ্রুততম সময়ে এ মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হবো।