ফেনী: ফেনীতে জ্যৈষ্ঠের খরতাপে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অসহনীয় তাপদাহে মানুষ ঘরেও টিকতে পারছেন না।খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে রীতিমতো অসহনীয়। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে গেছে পুকুর-জলাশায়। ভূগর্ভস্থ গভীর অগভীর নলকূপের পানি নামতে শুরু করেছে নিচের দিকে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। অপরদিকে হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েকদিন ফেনীতে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। যার মধ্যে শনিবার (২২ মে) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ফেনীতে রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮.০৮ ডিগ্রি। রোববার (২৩ সে) ফেনীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। সোমবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে শোচনীয় অবস্থায় আছেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। প্রখর রোদের মধ্যে কাজ করে অনেকেই ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রিকশা রেখে শহরের শহীদ মিনারের কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা চাল ক আজগর আলী জানান, অসহ্য গরমে তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না রিকশা চালানো। তাই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আব্দুল মতিন নামে অপর এক রিকশাচালক বলেন, অসহ্য গরমে রিকশা চালাতে পারছি না। কিছুক্ষণ চালালে পানির তৃষ্ণা পায়।নেই বাতাস, ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও গরম। বাইরের আবস্থা আরও ভয়াবহ, রোদের তাপ, আর গরমে শ্রমজীবী মানুষের যেন নিস্তার নেই। ঘেমে একাকার, অসহ্য গরমে যেন নাভিশ্বাস উঠেছে ফেনীবাসীর। শুধু যে কেবল শহরের এ অবস্থা তা নয়, গ্রামেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সকাল ৮টার পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। তীব্র গরমে সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।শহরের পূর্ব উকিল পাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, বাইরে প্রখর তাপ, ঘরেও শান্তি নাই। গোসল করে শরীর ঠাণ্ডা করার উপায়ও নেই। লাইনের পানি যেন ফুটানো- শরীর পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে হয় কেউ গরম পানি ঢেলে দিচ্ছে। রোদে বাড়ির ট্যাংকের পানি এতটা গরম হতে পারে তা ধারণার বাইরে।শহরের শান্তি কোম্পানী এলাকার এরশাদ নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী জানালেন, বাইরে জরুরি কাজ ছিল। কিন্তু ঘর থেকে বের হতে সাহস পাননি। দিনের পুরোটা ঘরেই কাটিয়ে দিয়েছেন।শহরের রাজাঝির দিঘি পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমজীবী খেটে খাওয়া রিকশা-ভ্যান চালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তার পাশের শরবতের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন। অসহনীয় গরম থেকে বাঁচতে ঠাণ্ডা জলে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। আফসার নামের এক রিকশা চালক বলেন, গরমের কারণে রিকশা চালাতে না পারায় সারা দিনে একশ টাকাও আয় করতে পারিনি।শহরের বড় বাজার নিউ মার্কেটের দোকানি আরাফাত হোসেন বলেন, সারাদিন দোকানে বসে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তেমন নেই। গরমের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতেই চাইছে না। নিতান্ত কাজ না থাকলে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। তবে শহরের রাজাঝির দিঘীসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ, আম ও লিছুর বিক্রি ছিলো লক্ষনীয়।গরমে শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সংকট তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়াও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর-কাশিতে।ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ইকবাল হোসেন জানান, ২৩ মে হাসপাতালের ১৭ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জন শিশু ও ৮ জন প্রাপ্ত বয়স্ক।
বাড়ছে পাখা/এসি বিক্রি
প্রখর তাপে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ ঘরেও টিকতে পারছেন না। একটু স্বস্তির জন্য গরিব-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ছুটছেন বৈদ্যুতিক পাখা কিনতে। শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইলেকট্রনিক্স পণ্য ওয়ালটনের পরিবেশক ইমাম ফারুক ভূইঁয়া বলেন, কিছুটা কমদামি পাখার বিক্রি বেশি হচ্ছে। খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণির মানুষ পাখা কিনতে বেশি আসছেন। এছাড়া এসি বিক্রিও বেড়েছে।