মাদারীপুর প্রতিনিধি : বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের সহজতম পথ এটি।প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই নৌপথ পারি দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। ঈদ মৌসুমে এই নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। লাখ লাখ যাত্রী বাড়ি ফেরে। আবার ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেয়। নৌরুটে ৮৬টি লঞ্চ, ২ শতাধিক স্পিডবোট এবং ১৮টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করে। এই নৌরুটেই দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ‘পদ্মাসেতু’ নির্মিত হচ্ছে। নৌরুটে লঞ্চ, ফেরি বা স্পিডবোটে করে যাতায়াতের সময় যাত্রীদের চোখে খুব কাছ থেকেই ধরা দেয় স্বপ্নের পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতু চালু হলে পদ্মা পার হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, এমন প্রত্যাশা যাত্রীদের। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের এমন প্রত্যাশার কথা জানা গেছে। বরিশালের গৌরনদীর মো. হান্নান মিয়া। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের দুইদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাড়ি যেতে এবার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে এই পদ্মায়। লঞ্চ স্পিডবোট বন্ধ। ফেরিতে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা ছিল না। ঘাটে নেমেও গাড়ির ভীষণ সংকট ছিল। এবার ঢাকায় ফেরার পথেও একই রকম কষ্ট। বেতন যা পাই, ভাড়া দিতে দিতেই শেষ। পদ্মাসেতু চালু হলে এই কষ্ট আর পোহাতে হবে না।জানতে চাইলে অপর যাত্রী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পদ্মাসেতু চালু হইলে এই কষ্ট আর থাকবো না। ঘাটের ভোগান্তি আর সহ্য করা যায় না।পদ্মাসেতু কবে চালু হইবে ভাই? জানতে চেয়ে আব্দুর কালাম মুন্সী বলেন, পদ্মাসেতু চালু না হইলে এই দুর্ভোগ শ্যাষ হইবে না। ঈদের সময় যেই কষ্ট মানুষের হয়, তা সাহেবরা তো কেউ বুঝতে পারবে না। গরিব মানুষেরই যত কষ্ট।সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম হলেও এখনো ঘরমুখো যাত্রীদের বেশি ভিড় রয়েছে। শিমুলিয়া থেকে ফেরিতে যাত্রী বোঝাই হয়ে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে আসছে। তবে ফেরিতে যানবাহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। বিআইডব্লিউটিসির ঘাটের ইজারাদার ফেরিতে ওঠার আগেই ভাড়া নিয়ে নিচ্ছেন। যাত্রী প্রতি ২৫ টাকা করে ভাড়া ফেরিতে। টিকিট কেটে যাত্রীরা সুবিধামত চারটি ঘাটের যেকোন ঘাট থেকেই ফেরিতে উঠতে পারছেন। অন্য দিনের চেয়ে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকায় ভোগান্তি কিছুটা কম রয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।আইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে গত রোববার থেকেই এই রুটে ঢাকাগামী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ঈদের অষ্টম দিন শুক্রবারেও (২১ মে) সকাল থেকে নৌরুটে ঢাকাগামী চাপ কমেনি। সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা কর্মস্থলের দিকে ছুটছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় একমাত্র ফেরিতেই পার হতে হচ্ছে পদ্মা নদী। নৌরুটে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় বাড়ানো হয়েছে ফেরির সংখ্যাও। ১৬ থেকে ১৮টি ফেরি নিয়মিত চলছে নৌরুটে।চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যাত্রীদের ভিড় কমে আসতে শুরু হয়েছে। আগামী দুই/এক দিনে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি নেই ঘাটে। তাছাড়া ঈদের চাপও কমে আসতে শুরু করেছে।