নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে দৃষ্টিনন্দন এলাকা হলেও শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানি যেন হাতিরঝিলের সেই সৌন্দর্যকে অনেকটাই ফিকে করে দেয়। ফলে এখানে আসা দর্শনার্থী এবং এলাকাবাসীকে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়।তবে শুষ্ক মৌসুমের সেই দুর্গন্ধ আর ঝিলের বিবর্ণ পানি থাকছে না বেশিদিন। আগামী জুন থেকে শুরু হচ্ছে ঝিলের পানি পরিশোধনের কাজ।সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনই।হাতিরঝিল প্রকল্প সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে মানুষের বিনোদনের উল্লেখযোগ্য একটি স্থানে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এর পানি দূষিত হতে শুরু করে। এক সময় বিবর্ণ হয়ে পানির কোথাও কালচে, কোথাও সবুজ রং ধারণ করে। সেই সঙ্গে ঝিলের পানি থেকে আসতে শুরু করে উৎকট গন্ধ।হাতিরঝিল প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে এই পানি দুর্গন্ধযুক্ত আর মাঝে মাঝে বিবর্ণ হয়ে যেত। এতে করে হাতিরঝিলে আসা দর্শনার্থী, এলাকাবাসীকে এর কুফল ভোগ করতে হতো প্রতিনিয়ত। তবে আশার কথা হাতিরঝিলের পানি শোধন ও দুর্গন্ধমুক্ত করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে প্রকল্পটি নিয়েছিল তা আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। জুন মাসের পর থেকে হাতিরঝিলে আর এমন সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষরের হাতিরঝিল সংশ্লিষ্টরা।তথ্যমতে, প্রতি বছরই হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার আশেপাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার বর্জ্য এসে পড়ে এই ঝিলের পানিতে। এ থেকে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়ায়। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ থাকায় দুর্গন্ধ ও দূষণ সেভাবে বোঝা যায় না। তবে শুষ্ক মৌসুমে বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করে।এমন অবস্থায় ঝিলের বিভিন্ন স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় গুণগত মান পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাতিরঝিলের পানি অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় দূষিত। এই পানি খোদ জলজ প্রাণের জন্যও অনুপযোগী। ফলে পানি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঝিলের দূষণ।বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঝিলের পানি শোধনের একটি প্রকল্প হাতে নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে রাজউক। ঝিলের পানি শোধন ও দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নিয়েছিল রাজউক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঝিলের পানি রক্ষা পাবে দূষণ ও দুর্গন্ধ থেকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর নানান কারণে প্রকল্পের মেয়াদ একাধিক বার বাড়ানো হয়েছে।তবে এবার পানি শোধন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস।তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি আগামী জুন মাস নাগাদ এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। ঝিলের পানি শোধন ও দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষের দিকে আছে। গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। নয়তো এতদিনে কাজ শেষও হয়ে যেতো। তবে এখন কাজের যে অগ্রগতি তাতে বলব যে, কাজ একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জুন মাসের মধ্যেই এটা শেষ করতে পারবো বলে আশাবাদী।গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) হাতিরঝিল এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দুর্গন্ধ ও দূষণ দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেখানে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে হাতিরঝিল ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে চেয়েছেন আতিক।এ বিষয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে মেয়র আতিক বলেন, আমরা ওয়াসার খালগুলো চেয়েছিলাম। সেগুলো পাওয়ার পর সেসব খালে আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখান থেকে দীর্ঘদিনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করছি। খালগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। খালগুলোর মতোই হাতিরঝিলসহ ঢাকায় থাকা অন্যান্য জলাশয়গুলোও যদি আমাদের দিয়ে দেওয়া হয় আমরা সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবো। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে নিজেদের কাছে রেখে লাভ কী? আমাদের দিয়ে দিক।