আরাফাতরাও এখন নিজের নাম লিখতে পারে

আরাফাতরাও এখন  নিজের নাম লিখতে  পারে

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

২৫ কেজি ওজনের আরাফাত রহমান। বয়স ৯ বছর। চেহারাটা দেখতে খুব মায়াবী। তাকে দেখলে মনে হবে না তার বয়স এত বেশি। আরাফাতের দুটি পাই অচল। হাটতে পারে না। মা’ই যেন তার দুটি পা। বছর খানিক আগে তার মা স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন মায়ের কাঁধে চড়ে আসছে স্কুলে। আরাফাত এখন তার নিজের নাম লিখতে। শিখেছে অনেক কিছু। আরাফাতের পরিবর্তন দেখে হাসি ফুটেছে তার মায়ের মুখে।

একটি আধার ঘর আলোকিত করে যখন প্রিয় সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে নেমে আসে আনন্দ উচ্ছ্বাস। কিন্তু প্রিয় সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয় তখন পিতা-মাতার মাঝে নেমে আসে চরম হতাশা। সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন তা নিয়ে বাবা মা পড়েন দুশ্চিন্তায়।

প্রতিবন্ধী সন্তানকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৮ সালে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নে বহরমপুর প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার ১৭০ জনের অধিক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়ছেন প্রতিবন্ধিত্ব কোন রোগ নয়। এটা এক ধরনের অক্ষমতা, যা চিকিৎসা দ্বারা ভাল করা যায় না। তবে শিক্ষা, প্রশক্ষিণ ও খেলাধূলার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ভূমিকা রাখা যায়।

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবন্ধীদের সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস নেওয়া হয়। বয়স অনুুযায়ী পৃথক ক্লাস রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা, গান বাজনারও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি এবং অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষার আলো গ্রহণ করছেন। আধাকাঁচা টিনের তৈরি ঘরে চলে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে রয়েছেন ২৬ জন শিক্ষক কর্মচারী। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। তাই সরেজমিনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে কথা হয়।

শিক্ষার্থী জানান, আগে সবসময় মন খারাপ থাকত। পড়তে পেরে আমাদের আর মন খারাপ লাগে না। সমাজের ১০ জনের মতো আমরাও বাঁচতে চাই। করোনার মধ্যেও শিক্ষকরা আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় এক ব্যক্তির দান করা ৩০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতায় ও সংকট মোকাবেলা করে এখন পর্যন্ত টিকে আছে। শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহায়তায় চলছিল বিদ্যালয়টি। বর্তমানে করোনায় অসহায় পরেছেন শিক্ষক কর্মচারীরা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। পাননি কোন সরকারি সহায়তা। তাদের দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে বিদ্যালয়টি মডেল বিদ্যালয়ে পরিণত হবে। স্কুলের পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনেক সুন্দরভাবে করা হয় বলে জানান এলাকাবাসীরা।

বিদ্যালয়ের সভাপতি করিমজান বলেন, করোনার কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযান করছে। তারা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার দৃষ্টি দিলে হয়তো আমাদের বিদ্যালয়টি টিকে থাকবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলো রাসিক

মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি-৩ পরকল্পের চেক বিতরণ